আজ বুধবার ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যাদের অপরাধে তোলপাড় মিডিয়া

ইমাম খাইর, কক্সবাজারে : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:১২:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

সমুদ্রপাড়ের আবাসিক হোটেলে  পর্যটক নারীকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় মিডিয়া। শিরোনাম হচ্ছে প্রতিদিন। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে পর্যটন নগরীর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই 'কক্সবাজার বয়কট' ডাক দিয়েছে। সম্ভ্রমহানির আশঙ্কায় পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন, এই দায় কার? 

স্থানীয়রা বলছে, এমন পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ী কিছু চিহ্নিত অপরাধী। সমুদ্রপাড়ের ঝুপড়ি দোকান ও কয়েকটি কটেজে তাদের আস্তানা। সবকিছুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক আশিকুল ইসলাম ওরফে আশিক। সে শহরের বাহারছড়া এলাকার মৃত করিমের ছেলে। ছিনতাই, দখল, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৭টি মামলা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেল, ২০১২ সালের দিকে 'ছিনতাইকারী' হিসেবে পুলিশের খাতায় নাম উঠে আশিকের। একের পর এক অপরাধে জড়ায়। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হোটেল দখল, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ে নেমে পড়ে। ভারী হতে থাকে আশিকের গ্রুপ। বর্তমানে কক্সবাজারের ভয়ঙ্কর গ্রুপ হিসেবে বেশ পরিচিত তার দলটি। তার গ্রুপে রয়েছে শীর্ষ ১০ জন অপরাধী। যাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও মাদকের অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। আশিক গ্রুপের অনেক সদস্য বিভিন্ন মামলায় কারাগারেও গিয়েছিল। কারাগার থেকে বের হয়ে একই দলে যোগ দেয় তারা। দল বেঁধে মোটরসাইকেলযোগে গভীররাতে হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় তাদের বিচরণ। আদায় করে চাঁদা। গোয়েন্দা সংস্থার একটি দপ্তরেও আশিক গ্যাংদের বিষয়ে তথ্য রয়েছে।

আশিকের অপরাধ খর্বের অন্যতম সহযোগী ইস্রারাফিল হুদ জয়া। সে বাহারছড়া এলাকার সন্ত্রাসী শফির ছেলে। আশিকের সাথে জয়াও বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিল। তার সাথে রয়েছে মেহেদী হাসান বাবু ওরফে গুণ্ডিয়া। আবুল কাশেম ঝাউতলা এলাকার হোটেল সাগরগাঁও এর নাইট গার্ড। সন্ত্রাসী আশিকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে রয়েছে বাহারছড়া এলাকার মোবারক আলী। মোবারকের বিরুদ্ধেও রয়েছে পাঁচটির অধিক মামলা। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গিয়েছিল ৪ বারের অধিক। তবে সন্ত্রাসী আশিকের উত্থান মোবারকের হাত ধরেই। মোবারকের হাত ধরে আশিকের উত্থান হলেও অপকর্মে মোবারককে ছাড়িয়ে গেছে আশিক। মোবারকের অস্ত্রের যোগানদাতা সালাউদ্দিন। আশিক বাহিনীর অন্যতম অর্থযোগানদাতা কক্সবাজার বাস টার্মিনাল এলাকার আবুল কালাম ওরফে বড়-দা। আবুল কালাম কক্সবাজার শহরের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হিসেবে পরিচিত। সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। 

আশিকের ছিনতাই পার্টনার বাহারছড়ার জোবাইর। সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাহারছড়া এলাকার বিজয় দাশ, ইরফান, বাহারছড়ার আরিফুল ইসলাম ওরফে ছোট আরিফ। আশিক গ্রুপের এসব অপকর্ম ও ইয়াবা কারবারের অর্থযোগান দাতা হলো শহরের গাড়ির মাঠ এলাকার নুর নবী শাহিন। তার দৃশ্যমান কোন কিছুই না থাকলেও জীবন-যাপন আলিশান। শাহিনের স্থায়ী বাড়ি টেকনাফের হ্নীলা রঙ্গিখালী এলাকায়। বেশির ভাগ সময় আশিক ও মোবারকের সাথে ছবিতে দেখা যায় শাহিনকে।

সন্ত্রাসী আশিকের বেপরোয়া হওয়ার পেছনে হাত রয়েছে রাসেল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির। সে একটি স্থানীয় পত্রিকার সহ-সম্পাদক বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। শহরের বিভিন্ন অপর্কমে তদবির করে আশিককে ছাড়িয়ে নিত রাসেল। 

গাড়ির মাঠ এলাকার সাত্তার ও রোজিনা নামে এক দম্পত্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে আশিককে আশ্রয়দাতা হিসেবে। সাত্তার ও রোজিনাও চিহ্নিত মাদক কারবারি। যার কারণে আশিকের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গত ১৫দিন আগে আশিককে জামিনে বের করে আনে সাত্তার ও রোজিনা।

এবিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন- এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় ইতোমধ্যে আশিকসহ আরো তিন সহযোগির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।  আশিকের গ্রুপে যেসব অপরাধী রয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দ্রুত সময়ে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর রাতে পর্যটক দাবিদার এক নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনায় ২৩ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার সদর থানায় ৪ জনের নামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভিকটিমের স্বামী।

এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- আশিকুল ইসলাম আশিক, ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয়, মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। মামলাটি তদন্ত করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এই পর্যন্ত মূলহোতা আশিকসহ ৬ আসামি গ্রেফতার হলো।