দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে ১০৬টি কেন্দ্রে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ব্যালট বিতরণ করা হয়। রবিরবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষ এবং মহিল ভোটারের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কমতে থাকে।
সকালে বড়তাকিয়া যাহেদিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, ৯টি বুথে ৪ হাজার ৭২৬ ভোটের মধ্যে প্রায় ৪’শ ভোট সংগ্রহ হয়। এ কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত ছিলো। সকাল পৌনে দশটায় খইয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি একদম কম। এ কেন্দ্রে ৬টি বুথে মোট ভোটার ৩১৪৬। পৌনে দশটায় ভোট পড়েছে প্রায় দেঢ় শতাধিক। সকাল ১০টায় কবির মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ১০টি বুথের মোট ভোট পড়েছে ৮৮৫টি। একেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশী ছিলো। ভোটার আনা-নেওয়া নিয়ে একেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়।
সকাল ১০টা ২০মিনিটে মিরসরাই সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ৮টি বুথে মোট ভোটার ৩৭৯১ জন। ভোট সংগ্রহ হয়েছে সাড়ে ৫’শ। এই কেন্দ্রে চেয়ার প্রতীক ও হাতপাখা প্রতীকের এজেন্ট ছিলো না। বেলা ১১টা ৫০মিনিটে বড় কমলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মোট ৬টি বুথে ৩১১০ ভোটার এর মধ্যে সংগ্রহ হয়েছে ১৩%। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৩৬৮। বেলা সাড়ে ১১টায় দমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১০টি বুথের মধ্যে মোট ভোটার ৫২৯৬। ভোট সংগ্রহ হয়েছে ১’শ।
বেলা পৌনে ১২টায় হাইতকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি একদম শ‚ন্য। এ কেন্দ্রে ৮টি বুথের মধ্যে মোট ভোটার ৩৭৬৮। সকাল ১০টা পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৪৪৬টি। দুপুর সাড়ে ১২টায় কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়নি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১৯১ ভোটের মধ্যে সংগ্রহ হয় ২১%। একেন্দ্রে নৌকা, একতারা, টেলিভিশন ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ইরফান আল করিম বলেন, সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ভালো ছিলো। দুপুর হওয়াতে একটু কমে গেছে।
বাঁশখালী সরকারি প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের এজেন্ট মেহেদী হাসান নয়ন দুপুর ১টায় অভিযোগ করেন, নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমাদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। প্রকাশ্যে নৌকায় সীল মারার জন্য ভোটারদের বাধ্য করছেন। আমাদের সমর্র্থকদের উপর হামলা করছে। আমরা ভোট বর্জন করেছি।
সকালে মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বরত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিনের ঈগল প্রতীকের এজেন্ট নাহিদ হোসেনকে একটি বাড়িতে বন্ধি করে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মো. গিয়াস উদ্দিন পুলিশ নিয়ে ওই এজেন্টকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
সকালে ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের সমর্থক কমল দে নামে একজনের উপর নৌকা সমর্থকরা কর্তৃক হামলার ঘটনা ঘটে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমকপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক জয়া ধর বলেন, সকাল ৯টায় কমল দে নামে একজন হাসপাতালে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেন।
মিরসরাই উপজেলায় ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫২৫ জন ভোটার রয়েছে। তারমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে ৩০ থেকে ৩৪ হাজার করে ভোটার রয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে। ভোটারদের আসাতে বাধা দিচ্ছে। কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকায় সীল মারতে বাধ্য করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা স‚ত্রে জানা গেছে, ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০৬টি। বুথ রয়েছে ৭১৭টি। নির্বাচনে ১০৬জন প্রিজাইডিং, ১০৬ জন সহকারি প্রিজাইডিং, ৭১৭ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া জেলা পুলিশের ৩৭২ জন, হাইওয়ে পুলিশের ১২ জন, র্যাবের ১৭ জন, সেনাবাহিনীর ৪৫ জন, বিজিবির ১৪১ জন, আনসার ১২৭২ জন সহ মোট ১ হাজার ৮’শ ৫৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
মিরসরাই আসনে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. গিয়াস উদ্দিন (ঈগল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ (টেলিভিশন), জাতীয় পাটির মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন চৌধুরী (লাঙল), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (হাতপাঞ্জা), সুপ্রীম পাটির মোহাম্মদ নুরুল করিম আফছার (একতারা) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল মন্নান (চেয়ার)।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘কোন রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়া শান্তিপ‚র্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোট সুষ্ঠ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছে।’