আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মিরসরাইয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, কমছে পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৬ অগাস্ট ২০২৪ ০৮:৪৯:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম
  • পানি কমে যাওয়ায় ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন
  • কাঁচা ঘর ক্ষয়ক্ষতি বেশী
  • সিডিএসপির বাঁধে ফাটল

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৬ দিন পর ক্রমান্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি নেমে গেলেও দেখা যাচ্ছে ক্ষতচিহৃ। দেখলে মনে হবে যেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত জনপদ। আশ্রয়কেন্দ্র এখনো অবস্থান করছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে এখানকার ফেনী নদীর পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার থেকে এখানকার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। যা ছিল স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এতদ অঞ্চলে বিগত ৭০ বছররেও এমন পানি দেখেনি মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে ফেনী নদী তীরবর্তি উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্বজোয়ার, অলিনগর, পশ্চিম জোয়ার, বৈরয়া, কাটাগাং, ছত্তরুয়া, হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজমনগর, আজম নগর, পশ্চিম হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের পরাগলপুর, গোবিন্দপুর, তাজপুর, ইমামপুর, ধুম ইউনিয়নের উত্তর মোবারকঘোনা, উত্তর ধুম, নাহেরপুর, মৌলভী বাজার, গোলকেরহাট, মিনা বাজার, আনন্দ বাজার, শুক্রবারইয়ারহাট এলাকায় পানি কমেছে। ওচমানপুর ইউনিয়নের মরগাং, পাতকোট, সাহেবপুর, আজমপুর এলাকায় এখনো কোমর সমান পানি রয়েছে। এছাড়া ইছাখালী, কাটাছরা, মিঠানালায় এখনো পানি কোমর পরিমাণের চেয়ে বেশী পানি দেখা গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় মিরসরাইয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ী ও রাস্তা-বাড়ি ঘরের বেহাল দশা ফুটে উঠেছে। একচালা টিনের ঘর, মাটির ঘর, সেমিপাকা ঘর, কালভার্ট, গ্রামীণ সড়ক বেশী ক্ষতি হয়েছে। পানি জমে থাকায় গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন গ্রামে।

ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে মিরসরাইয়ের গুরুত্বপ‚র্ণ সিডিএসপির বাঁধে। বঙ্গোপসাগরের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৪ সালে মিরসরাই উপক‚লীয় এলাকা নির্মান করা হয় চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টের (সিডিএসপি) বাঁধ। ১১.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় অনেকদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ন হয়ে আছে। চলমান ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধে মুহুরী প্রজেক্ট ¯øুইচ গেটের দক্ষিণ পাশে এবার ফাটল দেখা দিয়েছে। মিরসরাই মুহুরী প্রজেক্ট মৎস্য চাষী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় অবৈধ ভাবে মৎস্য প্রকল্প করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এর ফলে সিডিএসপির বাঁেধ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বাঁধ সংস্কারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। 

তবে সিডিএসপি বাঁধ পানির ¯্রােতে ফাটল নয় বলে দাবী করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন। তিনি বলেন, ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে কেউ অসাধু উদ্দেশ্যে সিডিএসপি বাঁধ কেটে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ অংশ মেরামতের কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড শুরু করেছে আগামী ২ মাস সময় লাগবে পুরোপুরি মেরামতে। 

ধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা সরোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, আমাদের গ্রামে এখনো সাড়ে ৩ ফুট পানি রয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলো বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। 

হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আজমনগর এলাকার ওমর ফারুক বলেন, আমাদের ঘরে এখন পানি নেই, উঠানে সামান্য পানি রয়েছে। তবে বসতঘরের যে পরিস্থিতি আগামী এক সপ্তায়ও উঠা যাবে না। 

বিশুমিয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রায় ৬দিন পর সোমবার সকাল থেকে জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকসা চলাচল শুরু হয়েছে। তবে বন্যায় সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। 

ইছাখালী ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ধীরে ধীরে পানি কমছে। তবে পুরোপুরি পানি কমতে আরো সময় লাগবে। মানুষকে আরো কয়েকদিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে। বাড়ি ঘরের অনেক ক্ষতি হয়েছে। 

করেরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা ইমরুল আলম জানান, ফেনী নদী থেকে আসা পানিতে আমাদের ইউনিয়নে প্রায় ৫ ফুট পানি উঠে যায়। সোমবার থেকে বিভিন্ন গ্রামে পানি নামতে শুরু করে। এখন গ্রামের সড়ক ও কাঁচা ঘরগুলোর ক্ষতির ভয়াবহতা দৃশ্যমান হচ্ছে।

এদিকে সোমবারও উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওর স্যালাইন, ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে। তবে ভেতরের অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। 

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। অনেক ইউনিয়নে পানি নেমে গেছে। উপজেলার ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় এখনো পানি রয়েছে। আশা করছি বৃষ্টি না হলে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে। উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র এখনো প্রায় ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়ে আছেন। পানি কমাতে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেছেন। 

তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেডক্রিসেন্ট এ্যালমনাই, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথকভাবে বন্যাদুর্গত মানুষদের মাঝে বিশুদ্ধ পানীয়, ওষুধ ও খাবার বিতরণ করছেন।