আজ সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মিরসরাইয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৫৮:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে সাদিয়া আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সে মিরসরাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের পূর্ব গোভনীয়া আমবাড়িয়া এলাকার সিরাজুল হকের ছেলে তাজুল ইসলাম রুবেলের স্ত্রী। খবর পেয়ে সোমবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে স্বামীর বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে মিরসরাই থানা পুলিশ। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাদিয়ার পরিবার। সোমবার বিকেলে স্বামী তাজুল ইসলাম রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ। সাদিয়া আক্তার সীতাকুÐ উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড কাজীপাড়া এলাকার আলমগীর মেম্বার বাড়ির মো. খান সাবের মেয়ে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে সাদিয়াকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে মনগড়া গল্প সাজানোর অভিযোগ করেছেন সাদিয়ার মা রিনা আক্তার। জানা গেছে, ৪ বছর আগে তাজুল ইসলাম রুবেলের সাথে সাদিয়া আক্তারের ৭ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ মাস পর স্বামী রুবেল প্রবাসে চলে যায়। গত ১৫ দিন আগে সে ছুটিতে বিদেশ থেকে বাড়িতে আসে। আমবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাদিয়ার মামি মর্জিনা আক্তার বলেন, সোমবার সকাল ১০ টার দিকে সাদিয়া তার মাকে ফোন বলেন, আজকের মধ্যে ৯০ হাজার টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে। তখন তার মা বলেন আমার কাছে তো টাকা নাই অন্যজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বুধবারের মধ্যে দিয়ে আসবো। তিনি আরও বলেন, এরপর দুপুরে দোকানের লোকজন এসে আমাকে বলে আপনার ভাগনি আত্মহত্যা করেছে। তখন আমি গিয়ে দেখি সিলিং ফ্যানের সাথে সাদিয়ার লাশ ঝুলছে; খাটের উপর একটা মোড়ার উপর এক পায়ের হাঁটু বাকা অবস্থায় আছে। আত্মহত্যা করলে মোড়া তো স্বরে যাওয়ার কথা। সে যদি আত্মহত্যা করে দরজা ভিতর থেকে লাগানো থাকার কথা এবং দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করার কথা। দরজার তো কোন ক্ষতি হয়নি। আমার ভাগনিকে সিঙ্গারার সাথে কিছু মিশিয়ে খাওয়ানোর পর মেরে ফেলছে। সাদিয়ার মা রিনা আক্তার বলেন, বিয়ের পর তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফার্নিচার সহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে চাহিদা পূরণ করেছি। সোমবার সকালে আমার মেয়ে ফোন করে আজকের মধ্যে ৯০ হাজার টাকা দিতে বলে। অন্যথায় আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে বলে। আমি মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আগামী বুধবার টাকা নিয়ে আসবো বলেছি। কিন্তু দপুরে খবর আসে আমার মেয়ে নাকি আত্মহত্যা করেছে। তারা আমার মেয়েকে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা টাকা দিতাম। কিন্তু আমার মেয়েকে এভাবে মেরে ফেললো। আমার মেয়েকে হত্যার বিচার চাই। তিনি আরও বলেন, বিয়ের ৪ মাস পর স্বামী তাজুল ইসলাম ওমানে চলে যায়। গত ১৫ দিন আগে দেশে ফিরে আসে। আসার পর থেকে তাকে টাকার জন্য নির্যাতন করতো। সাদিয়া যেন তার কোন আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলতে না পারে সেই জন্য তার মোবাইলে সকলের নাম্বার বল্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং তাকে কোথাও যেতেও দিতো না। মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কবির হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলানো অবস্থায় গলায় ফাঁস লাগানো এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসলে এটি আত্মহত্যা না হত্যা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। গৃহবধুর স্বামী তাজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।