কার্যকরভাবে দারিদ্র বিমোচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হলে অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জরপাড়া মডেল একাডেমি সম্মেলন কক্ষে কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত বিশ্ব মানবাধিকার দিবস শীর্ষক সেমিনারের আলোচকবৃন্ত এমন মন্তব্য করেন। সভায় হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমেদ আনোয়ারি, সহকারি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, উখিয়া টিম লিডার মোঃ ইউনুছ বক্তব্য দেন। এছাড়া হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ, যুব সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ মোট ৫০ জন অংশগ্রহণ করেন। আইএসসিপি প্রকল্পের আহম্মদ উল্লাহর সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মোঃ মনিরুজজামান। চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারি বলেন, মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তযোগ্য এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার মোট ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ ধারা/অধিকার আছে যা সামাজের প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করে। সেমিনারে শিক্ষক প্রতিনিধিগণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ২০১৭ সালে স্থানীয় জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ- মাদ্রাসায় আশ্রয় দেয়, এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে এই অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়। তাই আমাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে যেন অন্যের মানবাধিকার লঙ্গন না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার সাথে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। আমাদের সকলেরই মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে। আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারো দ্বারা মানবাধিকার যেন লংঘিত না হয়। তিনি উপস্থিত ইমাম, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকদের মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসুচি বাস্তবায়ন এবং তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যেতে আহবান জানান। সহকারি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত উভয় কমিউনিটির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যেতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা ও মানবাধিকারের অংশ। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সবার মানবাধিকার রক্ষায় আরো জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত। মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে সবার উপর মানুষ সত্য শীর্ষক সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, মানবাধিকার ও শরণার্থী অধিকারের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বুদ্ধ করা, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের মধ্যে বিদ্যমান সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের আগ পর্যন্ত তাদের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষিত রাখতে সকলকেই সচেতন হতে হবে।