প্রাকৃতিক নৈস্বর্গে ঘেরা মিরসরাইয়ে ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মহামায়া লেকের নীল জলরাশি ঢেকে গেছে কচুরিপানা আর ময়লা আবর্জনায়। প্রায় দুই মাস সময় ধরে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা না থাকায় লেকের বেশিরভাগ অংশ কচুরিপানায় ছেয়ে যায়। বনবিভাগ কিংবা ঠিকাদার এটির পরিস্কারে দায়িত্ব না নিলেও স্বেচ্ছাশ্রমে পরিস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে বিডি ক্লিন মিরসরাই নামের একটি সংগঠন। পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগ দেয় বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় বোট চালকরাও।
বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে সংগঠনটির ২০ থেকে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক লেকে নেমে কচুরিপানা এবং ময়লা আবর্জনা পরিস্কার শুরু করে। এসময় বন বিভাগের ১২ জন শ্রমিক ও স্থানীয় ২০ জন বোট চালকও পরিস্কার কার্যক্রমে অংশ নেয়। এসময় লেক এলাকায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) হারুন উর রশিদ ও মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহেন শাহ্ নওশাদ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন মিরসরাই এর সমন্বয়ক মো. নুরের নবী জানান, গেছে বন্যা এবং বেশ কিছুদিন ধরে লেক এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা না থাকায় লেকের অধিকাংশ এলাকা কচুরিপানা এবং ময়লায় ভরে গেছে। বিশেষ করে এসময় লেকে ডিঙ্গি নৌকাসহ অন্যান্য জলযান না চলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বনবিভাগের আওতায় থাকা এ লেকটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর লেক এবং এটির সৌন্দর্য সারা দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে এটি পরিস্কারের দায়িত্ব নিয়েছি। এখানে আমাদের ২০ থেকে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।’
মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহেন শাহ্ নওশাদ জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা পানির ¯্রােতে লেকের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কচুরিপানা এবং ময়লা বাঁধের সামনে এসে স্তুপ হয়ে যায়। আমাদের আর্থিক বরাদ্ধ না থাকায় এটি পরিস্কার করতে সমস্যা হচ্ছিল। অর্থ বরাদ্ধের জন্য ইতিমধ্যে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিডি ক্লিন মিরসরাই নামের একটি সংগঠন স্বেচ্ছাশ্রমে পরিস্কারের দায়িত্ব নিলে তাদের সাথে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ১২ জন শ্রমিক দেওয়া হয়। এসময় স্থানীয় প্রায় ২০ জন বোট চালকও পরিচ্ছন্নতা কাজে অংশ নেয়। বুধবার লেকে জমা কচুরিপানা ও ময়লা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পরিস্কার করা হয়েছে। আমাদের অর্থ বরাদ্ধ আসলে পুরো লেক পরিস্কার করা হবে। বিডি ক্লিন মিরসরাই সংগঠনের ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক পরিচ্ছন্নতা কাজে অংশ নেয় বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের মিরসরাই রেঞ্জ এলাকায় পাহাড়ী বারো মাসি ঝরনায় কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয় মহামায়া সেচ প্রকল্প। এতে তৈরি হয় ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের লেক। যা আয়তনের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর। এরপর এটিকে সরকারের বনবিভাগ বোটানিক্যাল গার্টেন ও ইকোপার্কে রূপান্তর করে। পরে এটি বাণিজ্যিকরণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়।