আজ বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ই আশ্বিন ১৪৩১
চাক্তাই আসাদগঞ্জ উৎপাদিত হচ্ছে ভেজাল সেমাই

ভেজাল সেমাই বিক্রির মহোৎসব

Author Thedaily Shangu | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৯ এপ্রিল ২০২২ ০২:০৭:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

ঈদুল ফিতর মানে হচ্ছে হরেক রকমের সেমাইর ছড়াছড়ি। সেমাই ছাড়া যেন এ উৎসবের পরিপূর্ণতা পায় না। তাই ঈদের দিন সকাল থেকে প্রতিটি ঘরে ঘরে রান্না হয় সেমাই। এ উৎসব সামনে রেখে বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রামের চাক্তাই আসাদগঞ্জ এলাকায় উৎপাদিত ভেজাল ও মানহীন সেমাই বিক্রিরধুম পড়েছে। এই এলাকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টির ও বেশি লাচ্ছা সেমাই বা বাংলা সেমাই তৈরির কারখানা। প্রশাসনের নাকে ডগায় বসে ঈদকে সামনে রেখে এখানে তৈরি হওয়া বাংলা সেমাই ইতিমধ্যে বিক্রির উদ্দেশ্যে চলেগেছে খোলাবাজারের দোকানে দোকানে।

এসব কারখানায় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর ও শ্যাতশ্যাতে পরিবেশে এ্যানিমেল ফ্যাট এবং কৃত্রিম ঘি ও সুগন্ধি মিশ্রিত নিম্নমানের সব উপকরণ দিয়ে দেদারছে তৈরি হচ্ছে এই সেমাই। এসব সেমাই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া যে সকল কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন হাইজিন নিয়মনীতি। হরেক রকম কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি এসব সেমাই বাজারজাত করে আসছে অসাধু  মালিকরা।

মানুষের খাওয়ার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেমাই চট্টগ্রাম শহরের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে অবাধে চলে যাচ্ছে । এখানে গড়ে উঠা হাতেগোনা কয়েকটি সেমাই তৈরির বৈধ কারখানা থাকলেও কোনটিতেই দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি।

এসব পর্যাবেক্ষনে দ্বায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকায় অভিযানের পরবর্তীতে যেন-তেন ভাবে কারখানা পরিচালনায় একপ্রকারের লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে এইসব কারখানা মালিকগন। ফলে এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অস্বাস্থ্যকর সেমাই বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে ।

এসব সেমাই প্রতিদিন রিকশাভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় শহর ও গ্রামের হাট বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। উৎপাদনে যাওয়া এসব অস্থায়ী কারখানায় গড়ে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি। যা খোলাবাজারে বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।

সাধারণ ক্রেতারা বলেন, রমজানের ঈদে কি সেমাই ছাড়া চলে? ঘরে মেহমান আসলে প্রথমেই তো সেমাই সামনে দিতে হবে নাহলে কি ইজ্জত থাকে। আমরা তো সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছি আমাদের ভালো খারাপ দেখার জন্য। যারা এগুলো দেখার দ্বায়িত্বে আছে তারা তো মোটা অংকের বেতন নিচ্ছে তাহলে আমাদের আবার ও ভালোখারাপ যাচাই করতে হবে! তাহলে ওনারা বেতন নিচ্ছে কেন?

এদিকে জনবলের অভাব সহ প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে ও নিয়মিত স্যানিটারি ইন্সপেকশনের অভাবে নগরীতে ভেজাল ও মানহীন সেমাই তৈরির প্রবণতা দিনদিন বাড়ছেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সেমাই খেয়ে পেটে পীড়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় সাধারন জনগন। এসব সেমাই দামে কম হওয়াতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে নিন্মবিত্তের জনগন। তাই সুস্থ থাকতে হলে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ তাদের।

পঁচা ডিম, এ্যানিমেল ফ্যাট এবং কৃত্রিম ঘি ও সুগন্ধি মিশ্রিত সেমাই তৈরি যাতে না হয়, সেজন্য কারখানাগুলোতে নজরদারি রাখা হয়েছে।

এদিকে প্রতিবছরই ঈদের আগে অসাস্থ্যকর অনুমোদনহীন সেমাই কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যস্থা নেওয়ার কথা বললেও এসব খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে লোকদেখানো অভিযানে জরিমানা করেই দায়সারা হয়ে যায় সরকারি বিভিন্ন দ্বায়িত্বসীল প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে এখানকার অসাধু সেমাই ব্যবসায়ীরা।