বোলিংয়ে শুরু ও শেষটা হলো ভালো। উইকেট নিয়ে মাঝের ওভারগুলোতেও শ্রীলঙ্কাকে চাপে রাখে বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় নেমে পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। পরে কেবল ওই ছন্দটা ধরে রেখেই এসেছে জয়।
বুধবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। পরে ওই রান তাড়া করতে নেমে ১১ বল আগেই জয় পায় বাংলাদেশ।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে পাওয়ার প্লের শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে এসে মেডেন দেন শরিফুল ইসলাম। পরের ওভারে তার ফায়দা তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে আগের ছয় বলে কোনো রান করতে না পারা আভিস্কা ফার্নান্দোকে স্ট্রাইক দেন কুশল মেন্ডিস। প্রথম বলেই তুলে মেরে বোলার তাসকিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্য রানে ফেরেন আভিস্কা।
উইকেটে এসে প্রথম বলেই চার হাঁকান কামিন্দু মেন্ডিস। শরিফুল নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেও তিন রান দেন। কিন্তু তার পরের ওভারেই ১৭ রান হজম করেন তাসকিন। সব মিলিয়ে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৪৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। তাদের ওই রানের গতি স্পিনার এনে ঠেকিয়ে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
হুট করে সৌম্য সরকারকে বোলিংয়ে এনে সফল হন শান্ত। কুশল ও কামিন্দু মেন্ডিসের ৪২ বলে ৬৬ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। দুই চার ও তিন ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ রান করে সাজঘরে ফেরত যান কুশল মেন্ডিস। পরের ওভারেই কামিন্দু মেন্ডিস হন রান আউট। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক এই ব্যাটার কিছুটা দুর্ভাগাই।
কাভারে থাকা মাহেদী হাসানের হাতে বল পাঠান কামিন্দু। রান নিতে চাননি তিনি। কিন্তু দৌড়ে ততক্ষণে অনেকদূর চলে এসেছেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা সাদিরা সামারাবিক্রমা। এরপর দৌড় দিলেও পৌঁছাতে পারেননি কামিন্দু। মাহেদীর থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন রিশাদ। তিন চার ও ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রান করেন কামিন্দু।
সামারাবিক্রমাও বড় রান করতে পারেননি। ১১ বলে ৭ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন। এরপর ১৪ বলে ২৮ রান করা আশালাঙ্কাকে বোল্ড করেন মাহেদী হাসান।
শেষ জুটিতে ৩৭ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহ ১৬৫ পর্যন্ত নিয়ে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দাসুন শানাকা। ম্যাথিউস অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৩২ রান করে। ১৮ বলে ২০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন শানাকা। আগের ম্যাচে শেষ চার ওভারে ৬০ এর বেশি রান দিলেও এদিন বাংলাদেশ দেয় ৩৪ রান।
রান তাড়ায় নেমে শুরুটা দুর্দান্ত হয় বাংলাদেশের। এর মধ্যে অবশ্য তৈরি হয় বিতর্কেরও। প্রথম তিন ওভারে ২৮ রান তোলে স্বাগতিকরা। বিনুরা ফার্নান্দোর করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে আম্পায়ার দেন এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। তার বলে উইকেটরক্ষক ক্যাচ নেন সৌম্য সরকারের। আম্পায়ারও আউট দেন।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন সৌম্য। রিপ্লেতে স্পাইক দেখা গেলেও নট আউট ঘোষণা করেন থার্ড আম্পায়ার; তার ভাষ্য, যখন স্পাইক দেখা গেছে তখন বল ব্যাট পেরিয়ে গেছে। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় শ্রীলঙ্কার ডাগ আউট ও ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে।
পরে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৬৩ রান তুলে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। পাওয়ার প্লের পরের ওভারেই অবশ্য আউট হয়ে যান সৌম্য। মাথিশা পাথিরানাকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৫ চারে ২২ বলে ২৬ রান করেন তিনি। এক ওভার পর সাদামাটা আউট হন লিটন দাসও। ২৪ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান।
তবুও বাংলাদেশের জিততে কোনো অসুবিধা হয়নি। ৫৫ বলে ৮৭ রানের জুটিতে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। ছক্কায় জয়ের রান করে হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন শান্ত। ৩৮ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি, ২৫ বলে ৩২ রান করেন হৃদয়।