আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

বোয়ালখালীতে ভোটে নাই,মাঠে আছে বিএনপি, আওয়ামী ঘরনার প্রার্থীর পক্ষে চাইছেন ভোট

বোয়ালখালী প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৭ মে ২০২৪ ০৬:৪৩:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। দলীয় হাইকমান্ড এ সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ঘরনার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বিএনপির নেতাকর্মী। 

 

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সামিল হয়ে দু'মুখো আচরণ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

 

শেষ মূহুর্তের নির্বাচনী প্রচারের ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগ ঘরনার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের টেনশন এখন বিএনপির ভোটারদের নিয়ে। নিবার্চনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকার বিরুদ্ধে  ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন অনেকে। 

 

দলের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীরা কি উদ্দেশ্যে নেমেছেন তা স্পষ্ট নয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। তারা বলছেন, বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জনের কথা বলছেন। আবার লোক দেখানো কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিস্কারও করছে। 

 

নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজা বলেন, শান্তি প্রিয় বোয়ালখালীকে অশান্ত করার পাঁয়তারা চলছে।

 

রেজাউল করিম বলেন, 'বিএনপি বলছে এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না। এই অবস্থায় ভোটের মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা ষড়যন্ত্র মূলক।'

 

তিনি দাবি করেন, 'বিএনপি ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে নির্বাচন ও সরকারবিরোধী প্রচার চালাচ্ছে। তারপরও অন্তত ২০-৩০ জন নেতা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ হয়ে মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কৌশলে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে।'

 

বিএনপি নেতারা নির্বাচনী উৎসবে সামিল হওয়ায় সজাগ এবং সর্তক দৃষ্টি রেখেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। 

 

তবে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হতে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের কাঁধে ভর করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তাদের নানান প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দিচ্ছেন টাকা। এতে বোঝা যায় সর্ষে মধ্যে ভূত রয়েছে।

 

গত শুক্রবার (২৪ মে)  দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা ও বোয়ালখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল কালাম আবুসহ চারজনকে দলের সব ধরনের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা বিএনপি। এর আগে ১৯ মে যুবদলের তিন নেতা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে যুবদল।

 

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান  বলেছেন, 'নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে অংশ নেওয়ায় চার বিএনপি নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যারা নির্বাচনী মাঠে যাবে তাদেরও ছাড় নেই।'

 

তবে দলীয় সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। একাধিক বিশস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সমর্থিত ১০ শতাংশ ভোট দেওয়ার শর্তে আওয়ামী লীগ ঘরনার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে নেতাকর্মীরা। ফলে ভোটের হিসাব নিকাশে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কপালে।

 

সব ধরনের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র হাজি আবুল কালাম আবু, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক সুজন, সদস্য রেজাউল করিম রেজা মুন্সি, সারোয়াতলী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি জহির আহমদকে অব্যাহতি দিলেও শাকপুরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আজম খান,  পৌর কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপি নেতা মাহমুদুল হক, ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, পৌরসভা বিএনপির সদস্য জাহাঙ্গীর মাস্টারসহ আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। এছাড়া অন্তত ২০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ ঘরনারা প্রার্থী জাহেদুল হক, শফিউল আলম শফি ও মোহাম্মদ শফিকের পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এতে জামায়াত নেতাদের উপস্থিতিও রয়েছে বলে জানা গেছে।

 

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র হাজি আবুল কালাম আবু ছোট ভাই পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিউল আলমের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নামেন। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি নেতারা ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকলেও জেলা বিএনপি শুধু মাত্র আওয়ামী লীগের শফিউল আলম শফির পক্ষে মাঠে নামা বিএনপি নেতাদের চোখ রাঙাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এ বিষয়ে আবুল কালাম আবু বলেন, ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে অন্তত ২০ জন নেতা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মাঠে কাজ করছে। শুনেছি, যারা অব্যাহতি দিয়েছে, তারাও নাকি রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রার্থীর পক্ষে গোপন বৈঠক করেছেন। এসব এখন মানুষের মুখে মুখে।

 

বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছহাব উদ্দিন বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ সজাগ ও সর্তক রয়েছে। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই ব্যাপারে নজরদারি রয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। 

 

সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঈনুল হক বলেন, ভোট গ্রহণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনী সরঞ্জাম চলে এসেছে। আগামী ২৯ মে উপজেলার ৮৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সকালে ব্যালেট পেপার কেন্দ্রে পৌঁছানো হবে।

 

তিনি জানান, কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ দিয়েছিলেন।  অভিযোগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।



সবচেয়ে জনপ্রিয়