আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বৃক্ষরোপণ করে পুরস্কারের বদলে পেলেন ‘তিরস্কার’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১০ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৩৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

২০১৯ ও ২০২০ সালে হাটহাজারীর সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন  ব্যক্তিগত খরচে বিভিন্ন স্কুল ও সড়কের পাশে ৩০ হাজার বৃক্ষরোপণ করেন, যা সে সময় দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়। ২০২১ সালে রুহুল আমীন ও ও তার স্ত্রী ফারজানা শারমীন মৌসুমীকে বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার-২০২২ এর জন্য মনোনীত করা হলেও পরে তাদের বাদ দিয়ে এ পদক দেওয়া হয় হাটহাজারী উপজেলা পরিষদকে।

 

 

এমন পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের ২৮ মে পুরস্কারের জন্য তাঁদের আবেদন প্রত্যাহার করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করা হয়। ওই ঘটনার প্রায় দুই বছর পর বৃক্ষরোপণের জন্য মোহাম্মদ রুহুল আমীনকে ‘তিরস্কার’ এর শাস্তি প্রদান করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

মোহাম্মদ রুহল আমীন এখন বাংলাদেশ চা বোর্ড, চট্টগ্রামে সচিব (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বরত।

 

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘রুহুল আমীন ২০২২ সালের ৫ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষমেলার প্রাক্কালে হীন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল না হওয়ায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যথাযথ ও আইনসম্মত কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন’।

 

যদিও ওই প্রজ্ঞাপনে রুহুল আমিনের বাগান সৃজনের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রুহল আমীনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণ-এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তিনি বেশ কয়েকটি বাগান সৃজন করে জনস্বার্থের জন্য ইতিবাচক কাজ করেছেন বিধায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও তাঁকে সর্বনিম্ন দণ্ড ‘তিরস্কার’ প্রদান করা সমীচীন বলে প্রতীয়মান হয়।

 

এই দণ্ড প্রদানের কারণ হিসেবে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকাকালে  বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০২২ এর জন্য তিনি আবেদন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কার গ্রহণের সুযোগ না থাকায় মিথ্যা তথ্য ও জাল কার্যবিবরণী সহকারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গত ২৮ মে ২০২২ পুরস্কারের আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন এবং অনুরূপ মিথ্যা তথ্য ও জাল দলিল সরবরাহ করে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করানোর মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও সরকারে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন’।

 

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন দেখে হতবাক হয়েছেন হাটহাজারী তথা চট্টগ্রামের মানুষ। যে ব্যক্তির দক্ষতায় হাটহাজারীর দুর্গম মনাই ত্রিপুড়া পল্লী, বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদীর সুরক্ষায় যার অবদান ছিলো সর্বজন প্রশংসিত, যিনি নিজ উদ্যোগে ৩০ হাজার বৃক্ষরোপণ করে সুশোভিত করেছিলেন হাটহাজারী উপজেলা, সেই কর্মকর্তার উল্টো শাস্তির মুখে পরার ঘটনা তারা মেনে নিতে পারছেন না।  

 

 রুহল আমীন ও মৌসুমী দম্পতি  ৪ একর জায়গাজুড়ে ৪০০টি বনজ গাছ, ১৩০০টি ফলদ গাছ, ৫০০টি ভেষজ গাছ, ১০০টি শোভাবর্ধনকারী গাছ ও ১০০টি দেশিয় বিলুপ্তপ্রায় গাছ রোপণ করেন। এসব গাছের মধ্যে ৯৯ শতাংশই জীবিত আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন তারা। প্রতিটি গাছের গড় উচ্চতা ৪ ফুট থেকে ৭ ফুট।

 

মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।  



সবচেয়ে জনপ্রিয়