৪৫ বছর বয়সী রাজু আকতার। থাকেন ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিলের টিলা বেষ্টিত ঝোপঝাড় শহরটিলা গ্রামে। ভাঙা ঘরের সামনে বসে কাঁদছিলেন। কেন কাঁদছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একমাত্র সহায়-সম্বল ছিল একটি মাটির ঘর। সেই ঘরও এবারের বন্যায় ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। পাশের বাড়ীতে দুই সন্তান নিয়ে কয়েক রাত থেকেছি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন থাকা হবে। এখন কী হবে, কই যাবো? কোথায় থাকবো জানি না। সব শেষ হয়ে গেছে। এখনও কোনও সহায়তা পাইনি।
রাজু আকতারের স্বামীর নাম মোঃ ইলিয়াস। তিনি থাকতেন পার্শ্ববর্তী চা বাগানে। সেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। চা বাগানের মালিক বেশ কয়েক বছর পূর্বে শ্রমিকদের জন্য বাগানের বাহিরে জায়গা কিনে দেন। তখন সে একটি মাটির ঘর নির্মাণ করে চলে আসেন সুয়াবিল ইউনিয়নের বারমাসিয়া গ্রামের শহরটিলা এলাকায়। সেখানে রাজু আকতারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। সে ঘরে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান। ছেলেটি তৌহিদুল আনোয়ার হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র। মেয়েটি পড়ে স্থানীয় বারমাসিয়া তালুকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জানা যায়, রাজু আকতারের স্বামী চা বাগান থেকে চলে আসার পরে দৈনিক মজুরীতে কৃষি ও কাঠুরিয়ার কাজ করতেন। বছর দেড় পূর্বে অন্য গ্রামে ইলিয়াছ কাঠুরিয়ার কাজ করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হয়। কয়েকদিন জীবনের সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এতে রাজু আকতারের সংসারে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। ছেলেমেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।
শুধু সুয়াবিলের রাজু আকতার নয়। ওর মতো ফটিকছড়ির এবারের বন্যায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছেন অনেক পরিবার। উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, ফটিকছড়িতে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৬ শ ঘর। আংশিক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে ৭২০০ ঘর।
গত সোমবার সরেজমিনে রাজুর ঘরে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা মাটির ঘরের সামনে দুই সন্তান নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন রাজু আকতার। সম্প্রতি বন্যায় রাজুর ঘরটিও প্লাবিত হয়েছে। প্লাবনের ফলে দুই কক্ষ বিশিষ্ট রাজুর জরাজীর্ণ ঘরের দক্ষিণ দেয়ালটি ধ্বসে পড়ে গেছে। বাকি দেয়ালগুলো নড়বড়ে হয়ে আছে। যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ে মাটির সাথে মিশে যেতে পারে ঘরটি। রাজুর এখন আর মাথা গুজার ঠাঁই নেই।
প্রতিবেশীরা জানায়, বন্যার কবলে পড়ে স্বামী হারা রাজু ঘরটিই হারিয়েছে। অসহায় রাজুকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছেন তারা। অভাবের সংসার নিয়ে কিভাবে দিনাতিপাত করবে সে দুশ্চিন্তা প্রতিবেশীদের। স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, বন্যায় মানুষের খুব ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু রাজু আকতারের যা হয়েছে তা মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমি রাজুর বিষয়টি উপজেলা প্রসাশনকে জানাব। তার একটি ঘর নির্মান করা দরকার। সকলে যাতে তাকে মানবিক সাহায্য করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অতি বর্ষণের ফলে সৃষ্ট আকষ্মিক বন্যায় ফটিকছড়িতে ৮ হাজার বাড়ীঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৬০০ বাড়িঘর। আমরা চেষ্টা করছি সকলের পুনর্বাসন ব্যবস্থা করতে।