# ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ
# অবৈধ পথে শত কোটি টাকার মালিক
# সরকারী কাজে অনিয়মই যার নেশা
বান্দরবানের আলোচিত ঠিকাদার মোজাফর সরকারী ঠিকাদারী কাজে একের পর এক অনিয়ম করেই চলছে । আর এসব কাজে তাকে সহযোগীতা করতে এলজিইডির কর্মকর্তারা। সদর উপজেলার টংকাবতী এলাকায় সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়মের পর এবার সদর উপজেলার রেইছা এলাকায় ৩০ কোটি টাকার মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) নির্মাণ কাজে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তা উৎকোচ নিয়ে উল্টো তার পক্ষেই ছাপাই গাইছেন। অভিযোগ উঠেছে রেইছা এলাকায় মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ কাজে নিন্মমানের পাথর, রড়সহ অন্যান্য সামগ্রি ব্যাবহার করছেন মোজাফর। এই বিষয়ে স্থানীয়রা বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবরে স্বারকলিপি দিয়েছেন। স্বারকলিপি সুত্র জানা যায় মোজাফর আমদানীকৃত পাথরের কথা বলে নির্মাণ কাজে স্থানীয় ঝিড়ি-ঝর্নার পাথর ব্যাবহার করছেন। তাছাড়া কোয়ালিটিবিহীন রড় ও বালু ব্যাবহার করা হচ্ছে নির্মাণ কাজে। স্থানীয় ঝিড়ির ময়লা আর্বজনাযুক্ত বালু ব্যাবহার করায় কাজের মান দিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে ঠিকাদার মোজাফর লোক দেখানোর জন্য কিছু আমদানীকৃত পাথর পাথর, ভালো মানের বালু নির্মাণ কাজের সামনে স্তুপ করে রেখেছেন। যাতে তদারকি সংস্থা নিন্মমানের মালামাল ব্যাবহারের বিষয়টি টের না পায়। তাছাড়া নির্মাণ কাজের ১৮ মাস নিধারিত সময় ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হতে চলছে কাজের প্রায় ৫০ ভাগ এখনো বাকি। এই বিষয়ে ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাইলেন তদারকি কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মোরশেদ। তিনি বলেন কাজে আমদানী করা পাথর ব্যাবহার করা হচ্ছে। নিম্মমানের বালি ব্যাবহারের বিষয়টিও সঠিক নয়। কাজের মেয়াদ আরো ৪ মাস বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
এই বিষয়ে ঠিকাদার মোজাফর দৈনিক সাঙ্গকে বলেন কাজে আমদানী করা আমদানী করা পাথর ব্যাবহার করা হচ্ছে । অনিয়মের বিষয়টি সঠিক নয়।
ঠিকাদার মোজাফর এক সময় বান্দরবান বাজারের কেএসপ্রু মার্কেটে সরগম নামে একটি ইলেকটনিক পণ্যের দোকান চালাতেন। সময়ের ব্যাবধানের তিনি এখন শতকোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে সরকারী কাজে অনিয়মের পাশাপাশি ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।
অপর দিকে সদর উপজেলার টংকাবতীতে সংস্থাটির কর্মকার্তাদের যোগসাজশে তিনটি প্যাকেজে প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজে নিুমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কোটি টাকা লুঠের অভিযোগ উঠেছে। ২০ শতাংশ কাজ না করেই অফিস ম্যানেজ করে আগাম ৫০% কাজের বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন ঠিকাদার তাপস- মোজাফর চক্র। এ ঘটনায় সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পরেও ঠনক নড়েনি কতৃপক্ষের। এ বিষয়ে দুনীতি দমন কমিশন দুদকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে স্থানীয়রা।
সড়কে বালু দেওয়ার নামে প্রকৃতি ধ্বংস করে এসকেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ের লাল মাটি। বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী হাতিরডেরা সড়কে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও নয়ছয় কাজ করছেন সড়কের দ্বিতীয় ও তৃতীয় নম্বর প্যাকেজে। এক নম্বর ইট ব্যবহারের কথা থাকলেও ড্রেনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে দু’তিন নম্বর মানের ইট। সাববেইজ তৈরি না করেই মাটি কেটে করা কাঁচা সড়কের ওপর তড়িঘড়ি করে ডাম্পার ট্রাকে করে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে বালুমিশ্রিত কংক্রিটের বড় খোয়া (মেকাডম)। সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকরা সড়কের লেভেল মিলাচ্ছেন আর তাৎক্ষণিক রোলার দিয়ে ডলে সমান করা হচ্ছে ভালোমন্দ মিশ্রিত খোয়ার মেকাডম। রোলার দিয়ে ডলা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে খোয়াগুলো। তবে অনিয়ম ঢাকতে ঠিকাদাররা তড়িঘড়ি করে নির্মাণ কাজ চালালেও তিনটি প্যাকেজের কোথাও এলজিইডির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকেই দেখা যায়নি। কার্যাদেশের শর্ত মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর তদারকি করার কথা থাকলেও তাদেরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সড়কে বালু দেওয়ার নামে এসকেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে সাবাড় করে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় কেটে হাতিরডেরা এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করছেন ঠিকাদাররা। এলজিইডি অফিস ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের লামা-সূয়ালক সড়ক থেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা সড়ক পর্যন্ত হাতিরডেরা প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সড়ক নির্মাণ কাজের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বর্ধিত সময় নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। কিন্তু দ্বিতীয় প্যাকেজের কাজ ৫০ ভাগও এগুতে পারেনি। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় প্যাকেজের কাজ ৬০-৭০ শতাংশের মতো শেষ হয়েছে। সড়কের শূন্য থেকে তিন হাজার ৯২০ মিটার পর্যন্ত প্রথম প্যাকেজের কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইমু কনস্ট্রাকশনের নামে বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার মো. মোজাফ্ফর। কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা হলেও অফিস ম্যানেজ করে ব্যয় বাড়িয়ে ছয় কোটি ৩৯ টাকায় চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিল তুলে নিয়েছেন দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা। পরের প্যাকেজটি ৯২১ মিটার থেকে ছয় হাজার ৭৩০ মিটার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম ট্রেডার্সের নামে বাস্তবায়ন করছেন আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জ্বল কান্তি দাস ও তাপস দাস। এ কাজে প্রাক্কলিত মূল্য ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা থেকে ব্যয় বাড়িয়ে চার কোটি ৮৬ লাখ টাকায় চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কাজের কোনো অগ্রগতি না থাকলেও ইতোমধ্যে বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন এক কোটি নয় লাখ টাকা। দীর্ঘদিন পর গত মাসে পুনরায় কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। শেষের প্যাকেজটি দ্বিতীয় প্যাকেজের শেষাংশ থেকে ১০ হাজার ৯৮০ মিটার পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউটিমং-এর নামে বাস্তবায়ন করছেন শক্তিশারী সিন্ডিকেট। এ কাজেও প্রাক্কলিত মূল্য ছয় কোটি ৩৯ লাখ টাকা থাকলেও ব্যয় বাড়িয়ে ছয় কোটি ৮৯ লাখ টাকায় চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অফিস ম্যানেজ করে গত বছরই ২০ শতাংশ কাজ শেষ না করেই তিন কোটি সাত লাখ টাকা ৫০% কাজের বিল উত্তোলন করে নিয়েছিলেন ঠিকাদার। তবে দীর্ঘদিন পর নতুন করে কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। ইতোমধ্যে কাজের অগ্রগতিও এগিয়েছে ৫০ ভাগের মতো। সড়ক নির্মাণ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী আমানুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্যাকেজে প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কে পুরোনো ইট ছিল। সরকারিভাবে দামদরে ইটের অর্থ কেটে নিয়ে পুরোনো ইটগুলো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। যার কারণে বড় খোয়ার মেকাডমে ভালোমন্দ মিশ্রিত রয়েছে। সাববেইজ তৈরি করেই মেকাডম দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ে শতভাগ নিখুঁত কাজ করা কঠিন। কাজের মধ্যে ভুলত্রুটি হচ্ছে। সেগুলো পুনরায় ঠিকভাবে করানো হচ্ছে।
কাজের অগ্রগতি অনুসারে গত বছর জুন মাসের আগেই ঠিকাদাররা প্রথম দফায় বিল উত্তোলন করেছিলেন। অনেকে কমবেশি পেয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক মজুমদার বলেন অভিযোগ আসার পর আমি সাইট ভিজিট করেছি। অভিযোগগুলো ভুয়া। রাস্তার কাজে নদীর বালি ব্যবহার করা হচ্ছে।