দখল-দোষণে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমান্বয়ে ছোট হতে চলেছে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী। সিন্ডিকেটের হাতে দখল হয়ে যাচ্ছে নদীর দুইপার। উজাড় হয়ে গেছে সবুজ প্রকৃতি। প্রাচীন এই নদীর নাব্যতা ফেরাতে ড্রেজিংয়ের দাবি অনেক দিনের। সেই দাবি ও বাস্তবতা বিবেচনায় নদী খননের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রায় ২ মাস আগে থেকে কাজ চলছে।
ইতোমধ্যে মহেশখালী গোরকঘাটা মোহনার প্রয়োজনীয় অংশে ড্রেজিং করা হয়েছে। এরপর কক্সবাজার-মহেশখালী যাতায়াতের ঘাট তথা শহরের ৬ নং ঘাটে কিছু দিন ড্রেজিং করে। বর্তমানে উত্তর নুনিয়ারছড়াস্থ লঞ্চঘাট এলাকায় ড্রেজিং কাজ চলছে।
তবে ঘাট ইজাদারদের অভিযোগ, ঠিক মতো ড্রেজিং করছে না। যথেষ্ট লুকোচুরি হচ্ছে। প্রয়োজনীয় স্থানে খনন না করে ইচ্ছে মতো কাজ চলছে। যেখানে সুন্দর-স্বচ্ছ বালি আছে সেখানে খনন করা হয়। কাদামাটি এড়িয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া ড্রেজিং করে নদী থেকে উত্তোলিত বালি বিক্রির টাকা কার পকেটে, কোন হিসাব নেই। বালুর টাকা মাটিতেই শেষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সঠিকভাবে ড্রেজিং না করায় চরে আটকে থাকছে নৌ-যান। যা সামান্য ভাটাতে দৃশ্যমান হয়। ক’দিন আগে ঘাটে ভেড়ানোর পথে চরে আটকে যায় পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলি।
সঠিকমাত্রায় বাঁকখালী ড্রেজিং দাবি সবার। সেই সঙ্গে জনগুরুত্বপূর্ণ এই কাজে লুকোচুরি, অনিয়ম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
একজন ইজারাদার আক্ষেপ করে বলেন, নদী ড্রেজিং করার বিষয়ে তাদের কোন পরামর্শ নেয়া হয় নি। দায়সারা কাজ করছে। সে কারণে অনেক স্থানে চর থেকে গেছে। সরকারকে কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েও উপেক্ষিত ঘাটের ইজারাদার।
১০ জানুয়ারি সকালে ৬ নং ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নদীর মাঝখানে বেশ কিছু ছোট চর। যেখানে আটকে আছে মাছ ধরার ট্রলার। পূর্ণ জোয়ার না হলে নৌ-যানসমূহ চলতে পারে না। দুর্ঘটনায় পড়ে স্পীড বোট, লাইফবোট, ট্রলারসমূহ। হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যাত্রীরা। পর্যটকদেরও অনেক সময় বিড়ম্বনা, বিপত্তির শিকার হতে হয়। যদিও তার দায়ভার কেউ নিতে চায় না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে ড্রেজিং কাজে নিয়োজিত উপসহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে এ সব বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশনা ও স্থানীয়দের পরামর্শ নিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে। ৬ নং ঘাট এলাকায় প্রায় ৪০০ ফিট পর্যন্ত কাটা হয়েছে। যেখানে চর সেখানে কাটা হচ্ছে।
সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, নুনিয়ারছড়া থেকে প্রায় ৭০০ ফিট মোহনার দিকে ফিরে ড্রেজিং করা হচ্ছে। মাস-দু’য়েক পরে ৬ নং জেটিঘাট এলাকায় আবারো কাজ করা হবে। এভাবে নদীর সম্ভাব্য স্থানে খনন করে সাগরের মূল চ্যানেলের সাথে মেশানো হবে।
কাদা এড়িয়ে স্বচ্ছ বালু দেখে খননের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, কোথায় বালু আর কোথায় কাদামাটি, তা দেখে কাটি না। আমরা নদী খনন কাজ করি। আপাতত স্পীড বোট, লাইফবোট চলাচল উপযোগী করে কাটা হচ্ছে। তবে, প্রবল স্রোত ও জোয়ারের ধাক্কায় ড্রেজার ঢুকতে না পারায় নাজিরারটেক এলাকায় জ্রেজিং করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
উত্তোলিত বালু বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আরিফ হোসেন বলেন, ড্রেজিং থেকে উত্তোলিত মাটি-বালু রাখার জন্য যারা জায়গা দিচ্ছে তারাই আপাতত এসব ভোগ করছে। বালু বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমার মতো টাকা পাচ্ছে কি না জানা নাই। প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।