চট্টগ্রামে মোট বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ারে ১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।ফলে বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বন্দরনগরীর বাসিন্দারা পড়ছেন দুর্ভোগে।চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় জাতীয় গ্রিড থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় এবং শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
বিদ্যুতের এ পরিস্থিতির কারণে জেনারেটর, আইপিএসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অনেক গ্রাহককে। আবার যাদের সে সামর্থ্য নেই, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া দুর্বিষহ অবস্থায় থাকতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে পানি ও গ্যাসের চাপও থাকছে না। বাসা-বাড়ি ও হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো ঠিকমতো জ্বলছে না গ্যাসের চুলা। বিঘ্ন ঘটছে পানি সরবরাহেও।
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। দিনে সময় কাটলেও রাতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। নগরীর হালিশহর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, চকবাজার, ব্যাটারি গলি, আসকার দীঘির পাড়, আন্দরকিল্লা, শুলকবহর, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিতে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা মারুফা জাহান বলেন, রাতে গরমের কারণে ৩ বছর বয়সী মেয়ে ঘুমাতে পারে না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যানও চলে না। দিনে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ যায় আর আসে।
জামাল খান এলাকার সিকদার হোটেলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পানি সংকট দেখা দেয়। যার কারণে সম্প্রতি দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে অনেকেই পড়েন ভোগান্তিতে।
চেরাগি পাহাড় সংলগ্ন মোমিন রোডের মোগল দরবার হোটেলের কর্মচারীরা প্রতিদিন হোটেল বন্ধ করেন রাত ১২টায়। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বন্ধ করতে হচ্ছে বিকাল সাড়ে চারটায়। মালিক বেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট শুরু হয়। যার কারণে থাকে না পানি। গ্যাসের চাপও কম। কাস্টমার নেই, ব্যবসা চলছে না।
পিডিবি চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের চাহিদার তুলনায় গড়ে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি আছে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। কিন্তু পিক আওয়ারে চাহিদা ১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট’।
পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক চৌধুরী বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ থেকে সাড়ে ৮০০ মেগাওয়াট। তাই লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন, জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য শনিবার (৫ নভেম্বর) কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য খুলশী, ষোলশহর, স্টেডিয়াম, হাটহাজারী ও মোহরার আশপাশ এলাকায় সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।