আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের তালিকা করুন, ব্যবস্থা নিন

ইমাম খাইর, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৪ মার্চ ২০২২ ০১:২৪:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এম.পি বলেছেন, জনপ্রতিনিধিরাই সবচেয়ে দখলবাজিতে জড়িত। সে যেই দলের হোক। বন বিভাগে কর্মরত অনেকে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে দখলদারদের সাথে জড়িত। এসব লোকের কারণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে।

সোমবার (১৪ মার্চ) দুপুরে চকরিয়া উপজেলার মেদাকচ্ছপিয়া ও ফাঁসিয়াখালী সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় বেগম হাবিবুন নাহার এম.পি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। 

দুঃখের সঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই জনপ্রতিনিধিরা জড়িত। ঠিক সময়ে বাধা দিলে এমনটি হতো না। দখলদার, বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। 

মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান প্রাঙ্গণে সভায় প্রধান অতিথি বলেন, নিজের এলাকার বনজ সম্পদ নিজেকে রক্ষা করতে হবে। সর্ব সেক্টরে অপকর্ম হয়। শতভাগ সৎ মানুষ মেলে না। একে অপরের দোষ দিয়ে লাভ নাই। নিজেকে সৎ হতে হবে। পারস্পরিক দড়ি টানাটানি অবসান চাই। তাহলেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছতে পারব। বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের সহায়তা না, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, বাগানের ভেতরে বালু মহাল ইজারা দিয়ে সরকার কত টাকা পাচ্ছে? এর কারণে বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমপি জাফর বলেন, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের উন্নয়ন নাই। বালু তুলে একজন মামলার আসামি হয় আরেকজন। এসব বন্ধ করুন। সবুজ প্রকৃতি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাছের প্রতি মায়া মমতা গড়ে ওঠা দরকার। বনায়নের ভেতর থেকে সমস্ত ইট ভাটা বন্ধ করতে হবে। 

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাসের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন- প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোঃ আবু সুফিয়ান, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর সিনিয়র ডিরেক্টর রাশিদুজ্জামান আহমদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগীয় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার।

তিনি বলেন, ১৯৫১ সালে বন সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সবুজ বনায়ন দৃশ্যমান। জবর দখলের প্রবনতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবু বনকে সম্প্রসারণে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। বন রক্ষা করতে গিয়ে হতাহতের ঘটনাও রয়েছে। 

স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন মেদাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, ন্যাশনাল পার্ক কি তা আমরা এখনো জানি না। বন সম্পদের সৌন্দর্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। 

বন্য হাতির আক্রমণে নিহতদের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। তিনি অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ ও বনজ সম্পদ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। 

সরকারী দলের নেতা পরিচয়ে বন বিভাগের জমি দখল করে ইট ভাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার দাবি তুলেন ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন। 

সবুজ প্রকৃতি ও বনভূমি রক্ষায় জোরালো ভূমিকা কামনা করে বক্তব্য দেন খুটাখালী ইউপির চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহমান ও ফাঁসিয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন। 

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ আয়োজিত সভায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ সারওয়ার আলম, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, ফুলছড়ি রেঞ্জ অফিসার ফারুক আহম্মদ বাবুল, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। 

উপপ্রকল্প পরিচালক (নেকম) ডঃ শফিকুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠান শেষে বন সিপিজি সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়। 

উল্লেখ্য, মেদাকচ্ছপিয়া ও ফাঁসিয়াখালীতে ২১১ জন সিপিজি কর্মরত রয়েছে। বন রক্ষায় ইতোমধ্যে চারজন সিপিজি আত্মাহুতি দিয়েছে।