কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের হিমছড়িতে সহ-ব্যবস্থাপনা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে হিমছড়ি নিসর্গ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। ভিসিএফ ও সিএমসি সদস্যদের সমন্বয়ে সুশৃঙ্খল র্যালিটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে হিমছড়ি নিসর্গ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার ঘোস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নেকমের চেয়ারম্যান ড. আবদুর রব মোল্লা।
তিনি বলেন, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের আন্তরিক ভূমিকার কারণে দেশের বন্য সম্পদ অনেকাংশে রক্ষা পাচ্ছে। স্বাবলম্বী হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। আমরা সবার আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় একটি পরিবেশবান্ধব পৃথিবী চাই। এই লক্ষে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করব।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ ও হিমছড়ি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন কক্সবাজার রেঞ্জ অফিসার সমীর রঞ্জন সাহা। বন সংরক্ষণে তিনি সিএমসি সদস্যদের আন্তরিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে পাহাড়, বনভূমি, সবুজ প্রকৃতি ধ্বংসে জড়িত অসাধু লোকদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান।
প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার মোঃ আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সহ-ব্যবস্থাপনা দিবস সম্পর্কে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন নেকম ইকোলাইফ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ডক্টর শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, এক সময় যারা বন নির্ভর ছিল তারা আজ বনের পাহারাদার। সরকারি সম্পদ ও বনভূমি রক্ষায় সিএমসি সদস্যরা নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, হিমছড়ি সিএমসি সভাপতি এড. মোহাম্মদ আয়াছুর রহমান, সহসভাপতি মুফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা সহ-সভাপতি ইমাম খাইর।
ওই অনুষ্ঠানে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ৬ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রকৃতি বাঁচাতে টেকসই সহ-ব্যবস্থাপনা:
সহ-ব্যবস্থাপনা দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কী নোট উপস্থাপন করেন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার মোঃ আব্দুল কাইয়ুম।
তার দেওয়া তথ্য মতে, ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ ভোরে রক্ষিত এলাকার প্রকৃতি সংরক্ষণে জীবন উৎসর্গ করেন রফিকুল ইসলাম (২৮)। তিনি ছিলেন টেকনাফ বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, কক্সবাজারের শীলখালী সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের কমিউনিটি টহল দলের তরুণ সদস্য। রফিকুল ইসলামসহ মোঃ আলী (ফাঁসিয়াখালী), আলী আহমদ ও আজগর আলী (মেদাকচ্ছপিয়া), হিরু মিয়া (কাপ্তাই), মোঃ সাদেক (রেমা-কালেঙ্গা) সহ অন্যান্য স্থানীয় বনবন্ধু যারা বিভিন্ন সময়ে বনের সম্পদ রক্ষায় জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের আত্মত্যাগের স্মরণে, সম্মানে এবং শ্রদ্ধায় ২০০৯ সাল থেকে বন অধিদপ্তর, রক্ষিত এলাকার আশেপাশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, নিসর্গ নেটওয়ার্কের সকল সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে ২৩ মার্চ উদযাপিত হয়ে আসছে সহ-ব্যবস্থাপনা দিবস।
২০০৩-০৪ সাল হতে বন অধিদপ্তর নিসর্গ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু করে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে দুই-দশকের ধারাবাহিকতায় আজ দেশের ২২টি রক্ষিত এলাকায় ২৮ টি সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠন বন অধিদপ্তরের সাথে কাজ করছে এবং দেশ এর সুফল ভোগ করছে। এ যাত্রায় বন অধিদপ্তরের সাথে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে ইউএসআইডি, নেকম, কোডেক, সিএনআরএস, আরণ্যক ফাউন্ডেশন প্রমূখ।
নিসর্গ কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্যে চুনতি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্যের সহ- ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ইকুয়েটর পুরষ্কার ও টেকনাফের নারী কমিউনিটি টহল দলের ওয়াঙ্গারী মাথাই পুরষ্কার (২০১২) উল্লেখযোগ্য।
২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর সরকার প্রকৃতি সংরক্ষণে রক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনায় বন- নির্ভর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি প্রদান এবং রক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭ অনুমোদন করে। এর পরিপেক্ষিতে সরকার তথা বন বিভাগ বিধিমালা ২০১৭ বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। তবে এই বিধিমালার পুরো বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এই বিধিমালার আশু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন অধিদপ্তর রক্ষিত এলাকা সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে টেকসই করবে, সংরক্ষণ হবে জীববৈচিত্র্য, জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটবে বন-নির্ভর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর সম্মান প্রদর্শন করা হবে প্রকৃতির বনবন্ধু শহীদ রফিকুলসহ নিহত ও আহত জনদের।