আজ বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

ফেনী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে মুহুরী সেচ প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৫ জুলাই ২০২২ ০৬:৫৮:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

ফেনী নদীর মিরসরাই অংশে শক্তিশালী কার্টার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে করে একদিকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশের ৬ষ্ঠ মুহুরী সেচ প্রকল্প। গত কয়েকমাস ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে এই সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নিরবতার প্রশ্রয়ে স্থানীয়দের বাঁধা গাঁয়ে মাখছেনা তারা ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিরসরাই উপজেলার পশ্চিম তাজপুর গোবিন্দপুর মৌজার ফতেহপুর, আজমপুর এলাকায় ফেনী নদীতে ৫-৬টি বড় কাটিং ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এরপর অবৈধ বালুগুলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে ইজারাকৃত শুভপুর, মুহুরী ব্রিজ, ধুমঘাট, লেমুয়াসহ বিভিন্ন স্পটে নিয়ে বৈধ ঘাটে তুলে সেলস্ সেন্টারে রেখে তা বিক্রি করছে। এভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ফেনী নদীর মোবারকঘোনা থেকে মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোসৎব চলছে। প্রতিদিন ওইসব এলাকার ৫টি স্পট থেকে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে কয়েকটি প্রভাবশালী একটি মহল। অথচ ওইসব স্পট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা দেয়া হয়নি। বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিকের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ইজারা নেয়া হয়েছে কি-না আমরা বলতে পারবো না। আমাদেরকে বালু উত্তোলন করতে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই আমরা বালু উত্তোলন করছি। কার মাধ্যমে এসেছেন, কে বালু উত্তোলন করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা নাম জানাতে অপারাগতা প্রকাশ করেন। 

স্থানীয় মৎস্য চাষী নুরুল আমিন বলেন, ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন ফেনী নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। যার কারণে গত কয়েক বছরে প্রায় ১শ একর মৎস্যপ্রকল্প নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মৎস্য চাষী ভোলা মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, মো. সেলিম, রেজাউল করিম, ফরিদুল আলম, ফারুক মিয়া, শাহ আলম, ফারুক বাবুল, মফিজুল হক, ফিরোজ কবির সহ প্রায় অর্ধশত মাছচাষী। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩ কোটি টাকা। 

জানা গেছে, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের বিভিন্ন প্রভাবশালীরা বালু সিন্ডিকেট গঠন করে রাত-দিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়া ওইসব সিন্ডিকেট ধুম মৌজার মোবারকঘোনা, কাটা মোবারকঘোনা ও মুহুরী প্রজেক্ট ঘেঁেস বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এভাবে একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখলে নদীর পাশে অবস্থিত শত শত মৎস্য প্রকল্প নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়বে মুহুরী সেচ প্রকল্প ও নির্মানাধীন সোনাপুর সড়কের মুহুরী সেতু। তাই প্রশাসনের কাছে ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জোর দাবী জানাচ্ছি।

উপজেলার ৫ নং ওছমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট নদীর মিরসরাই অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা কারো বাঁধা আমলে নিচ্ছেনা। চক্রটি নদীর ১৫০ থেকে ২০০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়, মৎস্য প্রকল্প ও ফসলী জমি, সেচ প্রকল্প, সেতু নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সরকারের শত কোটি টাকার উন্নয়নের সুফল ভেস্তে যাবে। এটি উপজেলা সমন্বয় সভায় তোলা হবে।

এলাকার মৎস্য চাষী রাহাত মোর্শেদ জানান, শক্তিশালী কার্টার বোর্ড দিয়ে যেভাবে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করছে তাতে এই বর্ষায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে মিরসরাইকে রক্ষার সেচ প্রকল্প। নিঃস্ব হয়ে যাবে কয়েক শত মৎস্য চাষী। প্রশাসনের উচিত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে নদী রক্ষা করে কৃষক বাঁচানো।  

ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল, ম্যাসেজ পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মিনহাজুর রহমান বলেন, আমি ফেনী নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে শুনেছি। এই জায়গায় বালু উত্তোলনের কোন ইজারা নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারিদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনা হবে।