আজ শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যায় নাকাল জনজীবন নিহত ২, নিখোঁজ ১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফটিকছড়ি : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৩ অগাস্ট ২০২৪ ০৯:৫৫:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

ফটিকছড়িতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যপ্ত হয়েছে জনজীবন। গত চারদিন ধরে এ বন্যায় এক শিশুসহ ২জন নিহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে এক আরোও জন। উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে দিয়ে দিনরাত পার করছেন পানি বন্দি ২ লক্ষাধিক মানুষ। ফটিকছড়ি উপজেলা জুড়ে বন্যা দুর্গত মানুষের বাঁচার আকুতি, হাহাকার, আতংকে নির্ঘুম ভয়াল রজনীর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সেচ্ছাসেবী বিভিন্ন মানবিক সংগঠন ঝাঁপিয়ে পরে পানি বন্দি মানুষের উদ্ধার পক্রিয়া চালানোর পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে উপজেলা প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। যার কারনে মানুষের জান মালের অনেক ক্ষতি রোধ করা গেছে বলে সচেতন মহল মন্তব্য প্রকাশ করেন।

 

গত বুধবার থেকে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলার বাগানবাজার, দাঁতমারা ইউনিয়নসহ ফটিকছড়ির দুই পৌরসভা, ১৬টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে পানি বন্দি হয় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। এসময় অনেক পরিবারকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও সেচ্ছাসেবী কর্মীরা উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসে। এখনো পানি বন্দি হয়ে রয়েছে শত শত পরিবার। শত শত বাড়ি ঘর এখনো পানির নিচে। খাবার, ঔষধ ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামীন সড়ক পানিতে ডুবে এবং পানির স্রোতে ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। পাশাপাশি হালদার উপর নির্মিত নারায়নহাটের একটি কাঠের ব্রীজ পানির স্রোতে ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।

 

বিভিন্ন হাটবাজারে বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা বাণিজ্য। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে নিঁখোজ হওয়ার একদিন পর সামি (১২) নামে এক শিশু ও এমরান নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রজি আহমদ নামে এক ব্যক্তি এখনো নিখোঁজ রয়েছে। সে ভূজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুলতান আহমদের পুত্র।

 

নারায়নহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা কাউসার সিকদার জানান, নারায়ণহাটের বন্যা পরিস্হিতি খুবই খারাপ। আশে পাশের গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি-ঘরে এখনো পানি রয়েছে।

 

সুয়াবিল এলাকার এসএম নঈম জানায়, সুয়াবিলে বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। হালদার পাড় ভেঙ্গে আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

 

সুন্দরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল আজম বলেন, আমার ইউনিয়নে বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। গতকাল থেকে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবকদের সাথে নিয়ে আমাদের উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

 

এদিকে, পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর চাষের জমি, পুকুর, মাছের প্রজেক্ট ও পোল্ট্রী ফার্ম। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, উপজেলা চাষাবাদদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছ। পানি সরে গেলে ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করা সম্ভব হবে।

 

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা, জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধ্বস পরিস্থিতির জন্য খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বন্যা কবলিত এলাকাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে।  

 

উপজেলায় দুই পৌরসভাসহ প্রায় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ৫০ মেট্রিক টন চাল ও চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নিয়ন্ত্রন কক্ষে দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প  বাস্তবায়ন অফিসার আবুল হোসেন।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক গঠিত হয়েছে ২০টি ইউনিয়ন মেডিকেল টীম ও ৫ টি সদর মেডিকেল টিম। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক টীম গঠন করা হয়েছে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। রাতে আসা সেচ্ছাসেবক ও নৌকা দিয়ে বিপুল সংখ্যক দূর্গতদের উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই শুকনো খাবার বিতরণ করতে চাচ্ছেন, বিক্ষিপ্তভাবে বিতরণ না করে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারেন বলে জানিয়ে বলেন, উপজেলা প্রশাসন এর নিকট শুকনো খাবার বা ত্রান পৌছে দিলে আমরা দূর্গত এলাকার মাত্রা অনুসারে শুকনো খাবারগুলি পৌঁছে দিতে পারি।