ফটিকছড়িতে সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাব ইন নামে বেসরকারি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ৫ জুলাই(বুধবার) দুপুরের দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) এটিএম কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আরেফিন আজিমের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এসময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ ক্লিনিকটির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আরেফিন আজিম বলেন- 'ক্লিনিকটির লাইসেন্স কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়ার আগেই আমাদের অগোচরে ক্লিনিকটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্লিনিকটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।'
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন- 'সেবা ক্লিনিকের লাইসেন্স না থাকায় ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।'
সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাব ইন চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দত্ত বলেন, 'গতকাল অনাকাঙ্ক্ষিত যে ঘটনাটি ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। ইউএনও, এসি ল্যান্ড, ইউএইচও মহোদয় যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করেছে আমি সে সিদ্ধান্তকে স্বাগতম জানাই। আমরা অতিসত্বর লাইসেন্স নিয়ে আসবো। লাইসেন্স নিয়ে ইউএনও, ইউএইচও মহোদয়কে অবহিত করে পুনরায় সেবা কার্যক্রম শুরু করবো।'
তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, প্রশাসনের যোগসাজশে ফটিকছড়িতে সেবা ক্লিনিকের মতো বেশ কিছু নামসর্বস্ব বেসরকারী ক্লিনিক তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় চিকিৎসা সেবার নামে অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে ক্লিনিক মানিলকরা। উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসক ও নার্সদের ভূল চিকিৎসায় এ ধরণের অকাল মৃত্যুর ঘটনা অহরহ ঘটলেও রহস্যজনক কারণে এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।
এর আগে, মঙ্গলবার (৪ জুলাই) রাত ৮টার দিকে সেবা ক্লিনিক অ্যান্ড ল্যাব ইনে ভুল চিকিৎসায় জান্নাতুল মাওয়া প্রকাশ রনি নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার পর ভুল চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসককে খুঁজতে গিয়ে দফায় দফায় ক্লিনিকে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে ভুক্তভোগীর স্বজনরা। এসময় ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাররা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রাতে ক্লিনিক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মৃত প্রসূতির জান্নাতুল মাওয়া প্রকাশ রিনা (২৫) উপজেলার কাঞ্চননগর এলাকার মরহুম মোতালেব মেম্বারের বাড়ির ব্যবসায়ী মো. রুমান উদ্দিনের স্ত্রী।
নিহত প্রসূতির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রনিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্লিনিকে নিয়ে আসা হলে শারীরিক পরিস্থিতি ভালো ছিল। রনির স্বামী মো. রোমান বলেন, ‘সকালে ক্লিনিকে সুই পুশ করা নিয়ে গোলমাল হয়েছিল। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারপরও তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে। তাদের দায়িত্বশীলতার অভাবে আজ আমি আমার বউ-বাচ্চাকে হারালাম। এটা একটা হত্যা, আমি এই হত্যার বিচার চাই।'