আজ শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

পোল্ট্রির বর্জ্যে অপার সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৫ মে ২০২২ ১২:০৮:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

দেশের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে পোল্ট্রি শিল্প। বর্তমানে এ শিল্পে বিনিয়োগ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্ধকোটি লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান এ শিল্পে। সস্তায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের উৎস। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এই শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে পোল্ট্রির বর্জ্য সমস্যা নয়, বরং সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা দুই লাখ পাঁচ হাজার ২৩১টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা ৮৫ হাজার ২২৭টি ও অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার চারটি।

 সামনের দিনগুলোতে যত্রতত্র পোল্ট্রি বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার সুযোগ একেবারে কমে যাবে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে দেশের বড় পোল্ট্রি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ভাবছে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পোল্ট্রি বর্জ্যকে তারা এখন আর সমস্যা ভাবছে না, দেখছে সম্ভাবনা হিসেবে 

২০১৯-২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১৬টি পোল্ট্রি গ্র্যান্ড প্যারেন্ট ফার্ম, ২০৬টি লেয়ার ও ব্রয়লার ব্রিডার ফার্ম ও ৮ হাজার ৮০০টি লেয়ার এবং ব্রয়লার খামার রয়েছে। কার্যক্রম পরিচালনা করছে ২১৭টি ফিড মিল, ১৫টি মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট, ২ হাজার ১৫টি সোনালি মুরগির ব্রিডার খামার এবং ৫৩৪টি প্রাণিস্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোম্পানি। বর্তমানে দেশে মোট জিডিপির ১ থেকে ৩০ শতাংশ আসছে পোল্ট্রি শিল্প থেকে। তাই পোশাকশিল্পের পরই সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পোল্ট্রি শিল্প এরই মধ্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার পোল্ট্রির বর্জ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তার মতে, একটা সময় ছিল যখন পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ শুরু হয়নি। তখন হয়তো এতসব ভাবারও সময় ছিল না। সে সময় জায়গাও ছিল। তবে সরকারি নীতিকাঠামো ছিল অনেকটা দুর্বল। এখন দিন যত যাচ্ছে, জমি কমছে, কঠিন হচ্ছে সরকারি নীতিকাঠামো। সামনের দিনগুলোতে যত্রতত্র পোল্ট্রি বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার সুযোগ একেবারে কমে যাবে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে দেশের বড় পোল্ট্রি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ভাবছে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পোল্ট্রি বর্জ্যকে তারা এখন আর সমস্যা ভাবছে না, দেখছে সম্ভাবনা হিসেবে।

বিশ্বের বড় বড় দেশের কৃষিজমির পরিমাণ অনেক বেশি। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কম্পোস্ট সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় পোল্ট্রি লিটার (বিষ্ঠা)। খুবই সহজ পদ্ধতিতে সাধারণ কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে পোল্ট্রি লিটার রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদন করে সেগুলো প্যাকেটজাত অবস্থায় বাজারজাত করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোল্ট্রি লিটার থেকে জৈব সার উৎপাদনই শুধু নয়, লিটার দিয়ে তৈরি হচ্ছে বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ।

বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে পোল্ট্রি শিল্প গতি পায় এবং সস্তায় উন্নত আমিষের উৎস হিসেবে এ খাত জনপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পোল্ট্রি একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের রূপ ধারণ করে এবং বছরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়তে থাকে।