আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবান্ধব: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৯ মে ২০২২ ১১:০১:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সব থেকে পরিবেশবান্ধব বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  গ্যাস ফুরিয়ে গেলে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের বিদ্যুৎ দেবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। বুধবার (১৮ মে) আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।  

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

সরকারের উন্নয়ন ও অর্জন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল। এর ভেতরে আমাদের কিছু নতুন আঁতেল আবার জুটেছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেই দিলেন আমরা যে, রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি এটা না কি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর। আমরা প্রশ্ন হচ্ছে, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এটা হচ্ছে সব থেকে পরিবেশবান্ধব। গ্যাস তো চিরদিন থাকে না। এক একটা কূপের তার তো সময় নির্দিষ্ট থাকে। তেলভিত্তিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ আমরা করি, অনেক খরচেরও ব্যাপার। যদি কোন দিন এমন হয় যে, আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টই বিদ্যুৎ দেবে। আর এটা পরিবেশবান্ধবও একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এখানে বিনিয়োগটা বড় করে দেখা যায়। কিন্তু এর বিদ্যুৎ যখন উৎপাদন হবে আর এর বিদ্যুৎ যখন মানুষ ব্যবহার করবে আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখবে। আজ আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি বলেই সারা বাংলাদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা যখন রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলাম তখন কত সমালোচনা। আমরা যখন ডিজিটার বাংলাদেশ ঘোষণা দিলাম তখন কত সমালোচনা। এখন ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করেই আমাদের সমালোচনা করছে। তারা যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন এটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি। খালেদা জিয়ার আমলে, জিয়ার আমাল বা এরশাদের আমলে তাদের কি কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল। অধিকার ছিল, কতটুকু অধিকার ভোগ করতেন তারা। টক শো তারা করেই যাচ্ছেন, টক টক কথা বলেই যাচ্ছেন। তাদের তো গলাটিপে ধরি না, মুখ চিপেও ধরি না। বলেই যাচ্ছেন, সব কথা বলার শেষে বলে কথা বলতে দেওয়া হয় না। বিএনপির এক নেতা তো সারা দিন মাইক মুখে লাগিয়ে আছেন। সারাক্ষণ বলেই যাচ্ছেন। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হলো। চিকিৎসা করে তিনি আবার কথা বলছেন। কথা তো কেউ বন্ধ করছে না। তাদের আন্দোলনে যদি জনগণ সাড়া না দেয় সে দোষটা কাদের?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে, অর্থনীতিবিদ তিনি হিসাব দেখালেন তাকে আমি বলবো, তিনি কী এটা প্রকৃতপক্ষে জেনেই বলছেন, না কি না জেনেই বলছেন। আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবো না কারণ তারা অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন। কিন্তু একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে একটি মানুষের বা একটা জাতি যে কতটুকু উন্নতি হতে পারে সে তো আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকে দেখে কিন্তু তারা দেখে না চোখে।

পদ্মাসেতুর প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি হচ্ছে পদ্মাসেতু, এই পদ্মাসেতুর অর্থ বন্ধ করেছিলেন ড. ইউনুস। কেন, গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকে উপদেষ্টা হতে। এমিরেটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্যে, আরও উচ্চ মানের। সেটায় তিনি থাকবে না, তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না। ড. ইউনুস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারবেন না ১০ বছর। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। এই বয়সটা কমাবে কীভাবে, তিনি মামলায় যে হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনুস এবং যেটা আমরা শুনেছি, মাফুজ আনাম তারা আমেরিকায় চলে যান, স্টেট ডিপার্টেটমেন্টে, হেলারির কাছে ই-মেইল পাঠান। হিলারি লাস্ট একেবারে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার শেষ কর্মদিবসে পদ্মাসেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। যাক একদিকে সাপে বর হয়েছে। বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মাসেতু করতে পারে সেটা আজকে আমরা প্রমাণ দিয়েছি। কিন্তু আমাদের এখানে একজন জ্ঞানী লোক বলে ফেললেন পদ্মাসেতু দিয়ে যে, রেললাইন হচ্ছে তাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এ টাকা তো ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে এই ঋণ শোধ হবে কী করে কারণ দক্ষিণবঙ্গের কোন মানুষ তো রেলে চড়বে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন সেতুর কাজ হয়ে গেছে এখন সেতু নিয়ে আর কথা বলে পার পাচ্ছে না। রেলের কাজ চলছে, রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আমার মনে হয়, আমাদের সবাইকে তাকে চিনে রাখা উচিত। রেলগাড়ি যখন চালু হবে উনাকে রেলে নিয়ে চড়ানো উচিত।

পদ্মাসেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু করা হচ্ছে। কারণ স্পানগুলো যে বসাচ্ছে ওটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিলেন জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে।  

বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশি কথা বলে যাচ্ছে বিএনপি, এদের নেতৃত্ব কোথায়, নেতৃত্ব নাই। সব তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি দিয়ে নির্বাচনে জেতা যায় না। আর নির্বাচনে পরাজয় হবে জেনে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, কলুষিত করতে চায়। যারা একটু আমাদের জ্ঞানী-গুণী আঁতেলরাও উল্টোপাল্টা কথা বলেন তাদেরকেও বলবো দেশ চালাবার যদি ইচ্ছা থাকে তো মাঠে আসেন, ভোটে নামেন, কেউ ভোট কেড়ে নেবে না। আমরা বলতে পারি, আমরা ভোট কেড়ে নিতে যাই না। আমরা জনগণের ভোট পাই এবং আমরা পাবো কারণ আমরা জনগণের জন্য কাজ করেছি। সেজন্যই জনগণ আমাদের ভোট দেবে।

সবশেষে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অনেক দিন পর মন খুলে কথা বললাম। এ সময় তিনি বলেন, আসলে এই করোনা ভাইরাস বন্দি করে রেখে দিয়েছে আমাকে। ২০০৭ সালে ছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে বন্দি। এখন আমি নিজের হাতে নিজেই বন্দি।