তুচ্ছ ঘটনায় সপ্তাহ দুয়েক ধরে নেতিবাচক প্রচারণার পরও তেমন প্রভাব পড়েনি কক্সবাজারে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহজুড়ে সমুদ্র সৈকতে চোখে পড়ার মতো পর্যটক। ইনানী, হিমছড়ি, সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য ভ্রমণস্পটেও যাচ্ছে দেশী বিদেশি পর্যটক। তবে, স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা উপেক্ষিত। বিধি মানাতে প্রশাসনের অভিযানও থেমে গেছে। এসব কিছুর মাঝেও পর্যটক সমাগম আশানুরূপ মনে করছে স্থানীয়রা।
তবে, আবাসিক হোটেল সংশ্লিষ্টদের অভিমত, নতুন বছর ও সাপ্তাহিক ছুটি বিবেচনায় তেমন পর্যটক নেই। হোটেলের অর্ধেকের বেশি খালি। যেগুলো বুকিং হয়েছে তাও স্থানীয় পর্যটক। বিদেশি পর্যটক নেই বললে চলে।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যটন সেলের সদস্যরা কাজ করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের টিমও সৈকতে দায়িত্ব পালন করছে।
শহরবাসী বলছে, মনগড়া খবরে কান দেয় নি পর্যটকরা। সকল প্রকার বিরূপ প্রচারণা উপেক্ষা করে পর্যটক স্রোত অব্যাহত রয়েছে। এই বিরূপ প্রচারণা যেন কক্সবাজারের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
শুক্রবার সকাল ও বিকালে সমুদ্র সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো সৈকতজুড়ে পর্যটক আর মানুষ। কোথাও তীল ধারনের ঠাঁই নেই। হোটেল মোটেল জোনে দেখা গেছে, প্রায় হোটেলে বুকিং বেড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে শুরু করেছেন। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে তারা গন্তব্যে ফিরবেন। এরপর থেকে হয়তো একটু চাপ কমতে পারে।
এদিকে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষ। বেড়েছে তীব্র যানজট।
তবে পর্যটকদের দাবী, হোটেল ব্যবসায়ীরা নিয়মিত দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত দাম বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাবারের রেস্তোরাঁগুলোও নিচ্ছে চড়া দাম।
খবর নিয়ে জানা গেছে, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের বেশির ভাগ কক্ষ সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে আগাম বুকিং হয়ে যায়। একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের কোনো জাহাজেই খালি সিট মিলছে না। সব জাহাজের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। এ চাপ থাকবে অন্তত এক মাস।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলি পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্যমেলা। এতে শহরে স্থানীয়দের ভিড়ও বেড়েছে।
হোটেল মালিকরা জানান, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা কক্সবাজারমূখী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেস কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী বলেন, ‘পুরো জানুয়ারী মাস পর্যন্ত তাদের জাহাজে টিকেট সংকট রয়েছে। এতদিন ভ্রমণপিয়াসু লোকজন বের হতে পারেননি নানা কারণে। এখন প্রতিদিন যাত্রী ও পর্যটকরা টিকিটের জন্য ভিড় করছেন। আমরা কাউকে টিকিট দিতে পারছি না।’
সিলেট থেকে বেড়াতে আসা আলমগীর বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর আসা হয়নি। তাই এবার ছুটিটা কাজে লাগিয়ে দিলাম। অনেক ভালো লাগছে বেড়াতে এসে। দেখলাম ভিড়ের মাঝে পর্যটকরা কক্সবাজারে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন সে জন্য সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। এটি ভালো হয়েছে। তবে যথেষ্ট পরিবহন সংকট রয়েছে। বরাবরের মতো হোটেল ও রেঁস্তোরায় অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে।
বেড়াতে আসা পর্যটক ঢাবি ছাত্র আশফাক উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগের কক্সবাজার আর এখনকার কক্সবাজার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সৈকতে আগে প্রচুর ময়লা আবর্জনা থাকতো এখন প্রায় পরিস্কার। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনও তৎপর দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা খোরশেদ জানান, পর্যটন নগরীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি কিছুটা অপ্রপচার দেখে মনটা খারাপ ছিল পরে এখানে এসে দেখি পর্যটক আর পর্যটক। খুব ভালো লেগেছে।
কক্সবাজার হাটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাশেম সিকদার বলেন, প্রচুর পর্যটক এসেছেন সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে কক্সবাজারে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন সবগুলো যাতে বাস্তবায়ন হয় তার প্রতি তারা সতর্ক রয়েছেন।
টুরিস্ট পুলিশের এসপি মো: জিল্লুর রহমান বলেন, পরিবেশ শান্ত থাকায় ব্যাপক পর্যটক এসেছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে ট্যুরিস্ট পুলিশ সতর্ক নজর রাখছে।