নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় কক্সবাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। তাদের অনেকেই নিরাপত্তা শঙ্কায় ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে কক্সবাজার ছাড়ছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে ঘুরে হোটেল মালিক ও পরিবহন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে শহরের হোটেল-মোটেল জোনে ঢাকার উত্তরা থেকে আসা পর্যটক হাবিবুর রহমানের। তিনি মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার এসেছেন গত রোববার। সেন্ট মার্টিন ঘুরে আগামী শনিবার ঢাকায় ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু এখন তিনি তার সফর সংক্ষিপ্ত করছেন।
তিনি বলেন, আমি পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তাই রাতেই ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, বুধবার রাতের ধর্ষণের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবু পর্যটকরা আতঙ্ক বোধ করছেন।
পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে সচেষ্ট আছি।
ঝাউবাগান ও বিচে পর্যটকদের নিরাপত্তার অভাব আছে বলে যে অভিযোগ সেটি অস্বীকার করে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝাউবাগানের শৈবাল ও কবিতা চত্বরে পুলিশ বক্স রয়েছে। সেখানে পুলিশ নিয়মিত টহলে থাকে। সেখানে অপরাধীদের বিচরণ কিংবা আড্ডা দেওয়ার সুযোগ নেই।
এদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাত জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। এর মধ্যে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং বাকি তিনজন অজ্ঞাত বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস।
শনাক্ত হওয়া আসামিরা হলেন, আশিকুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার জয়া, বাবু ও রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। এদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন ছোটন জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপক। তাকে আটক করেছে র্যাব।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। সংঘবদ্ধ ধর্ষকচক্র ইচ্ছে করে ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে প্রথমে ঝগড়া বাঁধায়। পরে স্বামী সন্তানকে আলাদা করে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার নারী র্যাবকে জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে শিশু সন্তান নিয়ে কক্সবাজার পৌঁছান ওই নারী ও তার স্বামী। সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকত থেকে উঠে আসার সময় ভিড়ের মাঝে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার স্বামীর। পরে তাদের কাছে ক্ষমা চান ওই নারীর স্বামী। কিন্তু কৌশলে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধায় ওই যুবকরা। পরে ধাক্কাধাক্কি করে ওই নারীর কাছ থেকে স্বামী-সন্তানকে আলাদা করে ফেলে তারা। এক পর্যায়ে ছুরি দেখিয়ে এবং স্বামীকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে সিএনজি করে শহরের নির্জন স্থানে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তিনজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে।
ওই নারী জানান, এরপর দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজারের জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে আবারও তাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে হোটেলের কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায় ধর্ষকরা। পরে জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে ডেকে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন ওই নারী। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ।
তবে ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে কক্সবাজার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ওই নারীকে সহায়তায় এগিয়ে যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই নারী আরেকজনের সহায়তায় র্যাবকে ফোন দেন। র্যাব দ্রুত সাড়া দেয় এবং মধ্যরাতে হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।