আজ শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

নগরজুড়ে পথে পথে ভোগান্তি

মো. এনামুল হক লিটন: | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৪ নভেম্বর ২০২১ ০৩:০২:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

 

ক্রমশ: ভোগান্তির নগরীতে পরিণত হচ্ছে বানিজ্যিক রাজধানিখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নগরজুড়ে যানজট, ফুটপাত দখল, ভাঙ্গা সড়ক আর্বজনার ভাগাড়ে বিষিয়ে ওঠছে নগরজীবন। সেইসাথে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে নগরবাসী। অভিযোগ উঠেছে, এসব দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, তাদের ইচ্ছেকৃত অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার কারণে দিন-দিন নাগরিক দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। গতকাল সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুরাদপুর থেকে রৌফাবাদ পর্যন্ত সড়কে চট্টগ্রাম উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও ওয়াসার কাজ চলমান রয়েছে। ফলে রাস্তার উভয় পাশে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানচলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। একই অবস্থা নগরীর দেওয়ানহাট ওভার ব্রীজ থেকে একেবারে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়কে। চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে বিমানবন্দর সড়ক অন্যতম। আগ্রাবাদ বাদামতলী, বারেক বিল্ডিং, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড হয়ে বিমান বন্দর পর্যন্ত সড়কে লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ফলে মানুষের ভোগান্তির কোনো অন্ত নেই। সরেজমিনে উক্ত সড়ক ঘুরে দেখা যায, দেওয়ানহাট থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত পূরো সড়কটিই ভাঙ্গা, এর সাথে যুক্ত হয়েছে ধূলাবালির ভোগান্তি। এতে করে ওই সড়কে যানজট বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। আশপাশের ব্যবসায়ি, বাসিন্দা ও পথচারিরা জানান, এসব সড়কে প্রতিটি গাড়ির আসা-যাওয়ায় ভূমি পর্যন্ত কেঁপে ওঠে থরথর করে। আর ধুলা-বালিতে পুরো সড়ক অন্ধকারাছন্ন হয়ে মানুষের দমবন্ধ হয়ে আসে। ধুলাবালির কারণে প্রতিটি ঘরে-ঘরে রোগ বালাই লেগেই আছে। গতকাল নগরীর বারেক বিল্ডিংসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর দেওয়ান হাট মোড় থেকে আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা হয়ে বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্ন অংশে বড়-বড় গর্তে যানবাহন পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যন্ত্রাংশের। এসব গর্তে নির্মাণ কাজ এবং নালার পানি উপচে ওঠে গর্তগুলো ভরাট হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতার কারণে নগরীর দেওয়ান হাট মোড় থেকে আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা হয়ে বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্ন অংশে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে নির্মাণ কাজের কাঠ-লোহার টুকরো এবং নালার পানি জমে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি পথচারীদেরও পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এসব ভোগান্তি প্রসঙ্গে ম্যাক্স রেনকিং জেভি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মুনির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভোগান্তি নিরসণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কেরও বেহাল দশা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় দুই-তিন বছর ধরে করুণ অবস্থায় আছে সড়কটি। এতে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সড়কটির একপাশের বেশ কিছু অংশে সংস্কার করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পিচ ঢালাইও করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো পূর্বের অবস্থা হয়ে যায়। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে পাইপ লাইন বসানোর জন্য সড়কটি কাটে ওয়াসা। এজন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে একই বছরের ৮এপ্রিল সংস্থাটি সিডিএকে ৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা পরিশোধ করে। পাইপলাইন বসানোর পর গত বছরের মাঝামাঝিতে সড়কটি সিডিএকে দাপ্তরিক নিয়মে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এরপরও সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করেনি সিডিএ। ফলে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া সড়কটি এখনও বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে অক্সিজেন কাঁচা বাজার হয়ে কয়লার ঘর, নয়ার হাট, ওয়াজেদিয়া ও অনন্যা আবাসিকের মুখেও বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও জানান এলাকাবাসী।   

 

নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণ শেষে সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) বুঝিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু সিডিএ তা করেনি। ফলে আইনগতভাবে এখতেয়ার না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ এ সড়কে সংস্কার কাজ করেনি চসিক। তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস এ প্রতিবেদককে বলেন, ওয়াসা যতটুকু ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, ততটুকু কাজ করতে পারি। তিনি বলেন, আপাতত যেসব গর্ত আছে সেগুলো সংস্কার করে সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করে দিব। এছাড়া নগরজুড়ে বিভিন্ন সড়কে আরো বেশকিছু জনদূর্ভোগের চিএ চোখে পড়েছে। এরমধ্যে ফুটপাত দখল অন্যতম। এছাড়া সড়কের পাশে নালার ভাঙ্গা স্লাব, আর্বজনার ভাগাড়ে মানুষের দূর্ভোগ আরো বাড়িয়ে তুলছে। গতকাল আগ্রাবাদ সংলগ্ন শেখ মুজিব রোডের মহাসড়কের পাশে ও পাঁচলাইশ ৩নং ওয়ার্ডের নয়ারহাটের অদূরে একটি আবাসিক এলাকার পাশে স্তুপি করা আর্বজনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে করে ওই এলাকার প্রতিটি ঘরে-ঘরে রোগবালাই লেগে থাকে বলে জানিয়েছেন, ইলিয়াছ নামের এক বাসিন্দা। এছাড়া এসব এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষথেকে মশার ওষুধ ছিঁটানো হয় না বলে জানিয়েছেন, কয়লার ঘর সংলগ্ন গোলবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাবরিনা সুলতানা। ফলে দুপুর থেকে বিকেল গড়ালেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে স্থানিয় বাসিন্দারা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটার পাশাপাশি ডায়রিয়া-ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগবালাই লেগে আছে ঘরে-ঘরে। উপরুন্তÍু এসব ভোগান্তি লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করেছেন সচেতন মহল।