চট্টগ্রামের হালিশহরে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে (১৪) হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় আলমগীর মিয়াকে (৪৯) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর অভিযানে মানিকগঞ্জ থেকে আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়।
তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায়। র্যাব জানায়, আলমগীর এর আগেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। অপরাধ করে তিনি আত্মগোপনে চলে যেতেন। এ ঘটনার পরেও আলমগীর স্ত্রীকে নিয়ে মানিকগঞ্জে আত্মগোপনে ছিলেন।
বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের হালিশহরে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পরের দিন স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় মানিকগঞ্জ থেকে আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, নিহত স্কুলছাত্রী তিন ভাই বোন, সে সবার ছোট। তার বাবা পেশায় রিকশা চালক, মা পোশাক শ্রমিক, বড় ভাই ডেকোরেটরে ও ছোট ভাই ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন।
নিহত স্কুলছাত্রী মেধাবী হওয়ায় তার পরিবারের আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলো। ঘটনার দিন নিহত স্কুলছাত্রীর মা পোশাক কারখানায় চলে যান ও বাবা রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যান। দুপুরে ভিকটিমের মা বাসায় খাবার খেতে এলে তখন স্কুলের দুই সহপাঠী তার মাকে জানায়, ওই স্কুলছাত্রী প্রাইভেট পড়ার পর স্কুলে যায়নি।
পরবর্তীতে নিহত স্কুলছাত্রীর বড় ভাই প্রতিবেশী আলমগীরের তালাবদ্ধ বাসায় লাইট ও ফ্যান চালু দেখে সন্দেহ করেন। বিষয়টি তিনি বাড়ির মালিককে জানালে ঘটনাস্থলে এসে রাত ৯টার দিকে দরজার তালা ভেঙে আলমগীরের ঘরের ভেতরে খাটের নিচে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ওই স্কুলছাত্রীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিহত স্কুলছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও ধর্ষণের আলামত দেখতে পেয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই স্কুলছাত্রীর পরিবার।
গ্রেফতার আলমগীরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করেছেন আলমগীর। ঘটনার দিন সকালে ওই স্কুলছাত্রী কোচিং শেষে বাসায় আসে। তখন আলমগীর কৌশলে তাকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় স্কুলছাত্রী তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধর্ষণকারীকে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে ধর্ষকের হাতের আঙুলে কামড় দেয় এবং তার বাবা-মাকে জানিয়ে দেবে বলে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলমগীর ওই স্কুলছাত্রীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাসায় খাটের নিচে রেখে পালিয়ে যান।
বাসা থেকে বের হয়ে আলমগীর তার স্ত্রী যে গার্মেন্টেসে কাজ করে সেখানে যান। এলাকায় এক জনের সঙ্গে তার মারামারি হয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে হালিশহর ছেড়ে আত্মগোনে চলে যান।
গ্রেফতার আলমগীরের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আলমগীর আগে গার্মেন্টসে কাজ করতেন, বর্তমানে বেকার। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তিন মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাস শুরু করেন। তার স্ত্রীও একজন গার্মেন্টস কর্মী। তার বর্তমানে কাজ না থাকায় তিনি বাসাতেই থাকতেন।
আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপিড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে প্রথমে ধামরাই পরবর্তীতে সাভার, রাজবাড়ী ও সর্বশেষ মানিকগঞ্জ এলাকায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন আলমগীর।