আজ সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ই পৌষ ১৪৩১
তৎপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা, মাঠে নেই বিএনপি

দোহাজারী পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি

মোঃ আয়ুব মিয়াজী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৩০ নভেম্বর ২০২২ ০২:১৫:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

 

পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে সরগরম চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার নবগঠিত দোহাজারী পৌরসভার রাজনীতি। এই পৌরসভায় কে মেয়র, কাউন্সিলর কিংবা সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন- তা নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা বিশ্লেষণ চলছে। এই পৌরসভাতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তৎপরতা দেখা গেলেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা নেই। চন্দনাইশ উপজেলা দোহাজারী পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ ও ওয়ার্ড বিভাজন নিয়ে আইনি জঠিলতার কারণে নির্বাচন হচ্ছে না বিগত ৫ বছর। জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ১১ মে পুরো দোহাজারী ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের দুইটি ওয়ার্ড নিয়ে দোহাজারী পৌরসভা গঠনের ঘোষণা দেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে দোহাজারী পৌরসভা ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিভাজন এবং সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। নানান আইনি জঠিলতায় আটকে ছিল দোহাজারী পৌরসভা ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। গত ০১ সেপ্টেম্বর দোহাজারী পৌরসভার ওয়ার্ড বিভক্তির গেজেট প্রকাশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরিত স্মারক নং: ০৫.৪২.১৫১৮.৫১৪.০০.০০৮.২২.৭৭০ মূলে পত্র প্রেরণ করেন। উক্ত পত্রটি আমলে নিয়ে উপ-সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, পৌর-২ শাখার স্বাক্ষরিত স্মারক নং: ৪৬.০০.০০০০.০৬৪.৩১.১১৭.১৫/১১৮৫, তারিখ: ১৩ নভেম্বর’২০২২ পত্র অনুসারে ওয়ার্ড বিভক্তির প্রজ্ঞাপনগুলো বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশ করে প্রকাশিত গেজেটের ১০ (দশ) কপি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রেরণের জন্য উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসার মহোদয়কে অনুরোধ করা হয় এবং উক্ত পত্রে সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে যথাশীঘ্র সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে এখনও প্রকাশিত হয়নি সরকারি গেজেট বা পরিপত্র। শুরু হয়নি পৌর নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপও। নির্বাচন কমিশন থেকে কখন দোহাজারী পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে তাও জানা নেই কারও। তবে ধারণা করা যাচ্ছে স্থানীয় সাংসদের সৎ ইচ্ছা ও আন্তরিকতায় সকল বাধা অতিক্রম করে খুব শীঘ্রই গেজেট প্রকাশ হলে তাড়াতাড়ি ভোটার স্থানান্তরিত কাজ সমাধান করে দ্রæত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তারপরও সবকিছুকে ছাড়িয়ে নবগঠিত দোহাজারী পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মাঠে নামতে শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইচ্ছা মনের মধ্যে পোষণ করে প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো নেতা নিজে নিজে অথবা দলবল নিয়ে শো-ডাউনের চেষ্টার পাশাপাশি নতুন পৌর এলাকার ভোটার ও জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নতুনভাবে সৃষ্ট এ পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাড়াও পৌরবাসীদের মধ্যেও নানা আলোচনা-সমালোচনা ও দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ সাধারণ জনগণ অব্যবস্থাপনা মুক্ত পৌরসভা থেকে হয়রানি, দূর্নীতি, বৈষম্যহীন ও ঘুষ ছাড়া সঠিক সেবা পেতে অধির আগ্রহী। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করতে যারা মাঠে নেমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবর আলী ইনু, দোহাজারী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস শুক্কুর, সাধারণ সম্পাদক বশীর উদ্দীন মুরাদ, বিলুপ্ত দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজ কল্যান সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ, চন্দনাইশ উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নবাব আলী, দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ আবুল কাশেম লেদু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগ নেতা, ব্যবসায়ী আলহাজ লোকমান হাকিম, দোহাজারী পৌরসভা যুবলীগের আহবায়ক ও আলহাজ্ব আফজল মিয়া স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী মনসুর আলী ফয়সাল অন্যতম। নতুন পৌরসভার মর্যদা পাওয়া দোহাজারী পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহীদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেকটা চাঙ্গাভাব। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের অভাবনীয় সাফল্য এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই নৌকার পালে হাওয়া লাগানোর সম্ভাবনাকেই সবাই বিজয়ের পথ হিসেবে দেখছেন। দোহাজারী পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে অনুমান করা যাচ্ছে বিএনপি, এলডিপি, জাতীয় পাটি এবং ইসলামী ফ্রন্ট থেকেও মেয়র পদে প্রার্থী দেবে বলেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পৌরসভার নির্বাচনে অওয়ামী লীগ থেকে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণেচ্ছুরা কথা বলেছেন প্রতিনিধির সাথে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবর আলী ইনু বলেন, দীর্ঘ সাড়ে তিন যুগের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ পৌরসভার নাগরিকদের প্রকৃত নাগরিক সুবিধা প্রদান এবং দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ পৌরশহর গঠনের লক্ষ্যেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশা পোষণ করছেন। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস শুক্কুর বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে শেষ সময়ে এসে দোহাজারীবাসীর সেবা করার প্রত্যয়ে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বশীর উদ্দীন মুরাদ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দোহাজারী অবহেলিত, শোষণ-বঞ্চনা দোহাজারীর নিত্যসঙ্গী। এসব বৈষম্য থেকে মুক্ত করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত পৌরসভা গঠনে ভূমিকা রাখতেই তিনি নির্বাচনে করতে ইচ্ছুক। সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বেগ বলেন, পৌরসভা প্রতিষ্ঠায় তিনি যেভাবে তার মেধা ও শ্রম দিয়েছেন তেমনি শ্রমের বিনিময়ে পৌরবাসীর সুবিধার্থে দোহাজারীকে একটি আধুনিক মডেল নগর হিসাবে গড়ে তোলার ইচ্ছায় তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বলেন, অনেক বছর আগে থেকেই দোহাজারী কৃষিশহর হিসেবে পরিচিত। নানাপ্রান্ত থেকে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পৌর এলাকায় আসা কৃষকদের সুবিধার্থে নানা অবকাঠামো নির্মাণসহ নগর উন্নয়নে সরকারের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সংযুক্ত করার প্রয়াসে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। উপজেলা যুবলীগ নেতা লোকমান হাকিম বলেন প্রাচীন উপ-শহর দোহাজারীকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্য ও মাদকমুক্ত নগর হিসেবে গড়ে তুলতে আমার পিতা আমৃত্য কাজ করে গেছেন। তার পথ অনুসরণ করে আমিও পৌরবাসীর নাগরিক সুবিধা শতভাগ দেওয়ার প্রত্যয়ে এবং বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া। দোহাজারী পৌরসভা যুবলীগের আহবায়ক ও আলহাজ্ব আফজল মিয়া স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী মনসুর আলী ফয়সাল বলেন, দোহাজারীর হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনে আধুনিক ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় পরিনত করে সকল অন্যায়, অবিচার ও অনাচার এবং মাদকমুক্ত শিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে আমার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ইচ্ছা।