আজ শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
সংবাদ প্রচার ও সংগ্রহের জেরে

দৈনিক সাঙ্গুর প্রতিনিধি আয়ুব মিয়াজীকে প্রাণনাশের হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১২ জানুয়ারী ২০২৩ ১০:৩৩:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলাধীন দোহাজারীতে সংবাদ প্রচার ও সংগ্রহের জের ধরে দৈনিক সাঙ্গুর প্রতিনিধি সাংবাদিক মোঃ আয়ুব মিয়াজীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে নাসিম উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), সালাউদ্দিন সোহেল চৌধুরী (৪০), নুরুল আলম (৪০) ও মশিউর রহমান প্রকাশ রাশেদ (৪০) এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জন ব্যক্তি। গত ১১ জানুয়ারি (বুধবার) এ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। গত বুধবার এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন সহ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। যেটির জিডি নং: ৫১৯। 

হুমকিদাতারা প্রচারিত সংবাদের ডকুমেন্ট, বক্তব্যের রেকড ও সংগৃহীত সংবাদের তথ্য প্রদান এবং ভুক্তভোগীপক্ষগণের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করার জন্য এলাকার ও দেশের শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে সাংবাদিককে ভয় দেখিয়ে সংবাদ প্রকাশ, না হলে সাংবাদিকতার পেশা ও পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। এই হুমকিদাতা হচ্ছেন ১. নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, পিতা: মৃত আবুল হোসেন চৌধুরী, মাতা: মৃত মোমেনা খাতুন, ২. সালাউদ্দিন সোহেল চৌধুরী, পিতা: মৃত আবছার উদ্দিন চৌধুরী, উভয়ের ঠিকানা- গ্রাম:  আলমগীর, ধর্মপুর, ৩. নুরুল আলম, পিতা-তমিজ উদ্দিন, মাতা-কুলছুমা বেগম, ঠিকানা-মাইজ পাড়া, কালিয়াইশ, সকলের থানা- সাতকানিয়া, ৪. মশিউর রহমান প্রকাশ রাশেদ, পিতা-ফয়েজুর রহমান, মাতা-মোবারক খাতুন, ঠিকানা-হাজী বজলুর রহমান বাড়ী, দোহাজারী, চন্দনাইশ, চট্টগ্রামসহ আরো অজ্ঞাত ৮/১০ জন। 

 

 

সাংবাদিক মোঃ আয়ুব মিয়াজী জানান, আমি পেশাগত কারণে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করে আসছি। বিগত ৮ই জানুয়ারী ২০২৩ ইং তারিখে চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকায় “সাতকানিয়ায় প্রজ্ঞাপন না মেনে বিদ্যালয়ের ম্যানাজিং কমিটি গঠনে দখলদারদের থাবা’’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং কালিয়াইশে দ্বৈত পরিচয়ে ভোটার হয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা ও অনুমতি বিহীন মাটির ব্যবসায় জনভোগান্তির তথ্য সংগ্রহ করছিলাম। এর প্রেক্ষিতে  এই মহল আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। যাতে আমি অন্য নিউজগুলো প্রকাশ না করি। গত বুধবার ১০ জানুয়ারি  বিকাল সাড়ে ৪ টায় আমার পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত মিয়াজী কম্পিউটার ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (৭০১৯৫), আর কে প্লাজা, স্টেশন রোড, খান প্লাজার পূর্ব পার্শ্বে, রেল স্টেশনের পশ্চিম পার্শ্বে, দোহাজারী পৌরসভা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম- উল্লেখিত লোকজন আমার অফিসে অনধিকার প্রবেশ করে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমি বিকাল ৬টার দিকে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার মহোদয়কে ফোন দিয়ে নিরাপত্তা চাই। থানা থেকে পুলিশ আসতে আসতে তারা চলে যায়। যাওয়ার সময় আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যায়। এর পর থেকে আমি ও আমার পরিবার  নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছিলাম। তাই নিরাপত্তা ছেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছি। 

হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করে চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে সাংবাদিক মোঃ আয়ুব মিয়াজী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এই ডায়েরী সংক্রান্তে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দোহাজারী পুলিশ ফাঁড়ির অফিসার এস আই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

 

 

উল্লেখ্য প্রকাশিত সংবাদে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ৭৪ নং ধর্মপুর আলমগীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে দখলদারদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অহেতুক বিলম্ব না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছেন ভোটে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যগণ। জানা যায়, গত ০৭ নভেম্বর’ ২০২২ইং শিক্ষা কর্মকর্তা মহোদয়ের কার্যালয়ে ১১ জন সদস্য নিয়ে সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচন করার জন্য সভা ডাকেন এবং যথারীতি সভা শুরু হয়। কিন্তু প্রবাস ফেরত বর্তমানে ২য় শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যুৎসাহী সদস্য ২ নং হুমকিদাতা সালাউদ্দিন সোহেল এবং পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বাসিন্দা ৫ম শ্রেণি থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর অভিভাবক সদস্য ৩নং হুমকিদাতা নুরুল আলম সম্মানিত শিক্ষকদেরকে ভোটদানে বাধা সৃষ্টি করলে শিক্ষা কর্মকর্তা সভা মূলতবী করে ২ সপ্তাহ পরে পুনরায় নির্বাচনের সভা করার ঘোষনা দেন। এতে ম্যানেজিং কমিটি নীতিমালা ২.১ ও ২.১০ ধারা অমান্য করে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সমঝোতা না করলে এডহক কমিটি করার জন্য উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুতি গ্রহণ কারো কাম্য নয় বলে জানান সদস্যগণ। 

 

অন্যদিকে দ্বৈত পরিচয়ে ভোটার হয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ৩ নং হুমকিদাতা নুরুল আলম। তিনি কালিয়াইশ ইউনিয়নে তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ায় দুইটি জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিচায়নও বহন করার তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত নুরুল আলম কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মাইঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা। অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে তিনি ভোটার হালনাগাদ করন তালিকায় তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় দফায় ভোটার হয়েছেন। এ তালিকায়ও তার সব তথ্য ঠিক থাকলেও নাম, মাতার নামের বানান ও ঠিকানায় পরিবর্তন করা হয়েছে।  এদিকে এই ব্যক্তি দ্বৈত ভোটার হওয়ার এখবর এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে। দ্বৈত ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে তার অসৎ কোন উদ্দেশ্যে ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করেন তারা। তারা এটিকে দুর্ধান্ত প্রতারনা বলেও উল্লেখ করেছেন।

তথ্য প্রমাণ সুত্রে জানা যায় মোহাম্মদ নুরুল আলম, পিতা: তমিজ উদ্দীন, মাতা: কুলসুমা খাতুন, জন্ম তারিখ: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৯, জাতীয় পরিচয় পত্র নং-৭৭৯ ৭২৮ ৯৬৭০, গ্রাম/রাস্তা: ধইল্ল্যাপাড়া, ৩০১ নং সরই মৌজা, ডাকঘর: সরই-৩২৭৪, লামা, বান্দরবানের ১১ আগস্ট ২০১৮ সালে ইসুকৃত পরিচয় পত্র এবং চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলাধীন কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মাইংগাপাড়া ভোটার এলাকা নং ২৫০১, ভোটার নং- ৩২৬ এর নাম: নুরুল আলম, ভোটার নং: ১৫২৫০১০০০০৫৫, পিতা: তমিজ উদ্দীন, মাতা: কুলছুমা বেগম, পেশা: বেসরকারী চাকুরী, জন্ম তারিখ: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৯, গ্রাম: মাইঙ্গ্যাপাড়া, কালিয়াইশ, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম এর প্রকাশের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ দুইটি পরিচয় পত্র মূলে সরকারি কর্মকান্ড ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে। তিনি দুই এলাকায় দুইবার ভোটার হয়েছেন মর্মে প্রকাশ করে আসছেন। নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ ভোটার তালিকাতেও তার সত্যতা মিলেছে।  

কালিয়াইশ ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জসিম উদ্দীনের নিকট জানতে চাইলে-তিনি বলেন সে আমাদের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসতে দেখে আমি সমস্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করে দিয়েছি। সে আগে অন্য এলাকায় ভোটার হয়েছিল কিনা আমার জানা ছিল না।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বরত সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “দ্বৈত ভোটার হয়ে থাকলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র লক হয়ে গেছে। এই লক খোলার জন্য তাকে অফিসে এসে ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি কোন তথ্য পরিবর্তন করে থাকলে তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

 

উল্লেখ্য দেশের দ্বৈত ভোটারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এতদিন দ্বৈত ভোটারদের আগের জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক রেখে পরেরটি বাদ দেয়া হতো। অনেক ক্ষেত্রে দুই পরিচয়পত্রই অকার্যকর করে রাখতো ইসি। শুধু দ্বৈত ভোটার নয়, জেনেবুঝে এ ধরনের ব্যক্তিদের ভোটার হতে সহযোগিতাকারী ইসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে বলেও জানিয়েছিলেন ইসি।

ভোটার তালিকা আইন- ২০০৯ এর ১৮ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ভোটার হওয়া, কর্তনের ক্ষেত্রে এমন কোনো লিখিত বর্ণনা বা ঘোষণা দেয়া যা মিথ্যা এবং যা তিনি মিথ্যা বলে জানেন বা বিশ্বাস করেন বা সত্য বলে বিশ্বাস করেন না, তা হলে তিনি অনধিক কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার ধারা উল্লেখ আছে জানা যায়।