চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার ৫দিন পর মো. সাইমুন (১৮) নামে সাতকানিয়ার এক অটো রিক্সা চালক মারা গেছেন। গতকাল (বুধবার) ভোর ৬টার দিকে চমেক হাসপাতালে তিনি মারা যান। সাইমুন সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ফজুরপাড়া এলাকার অটোরিকশা চালক মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে। পরিবার ও স্থানীয়দের ধারণা, জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের তাকে হত্যার উদ্দেশ্য ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেছিল দুর্বৃত্তরা। এ ব্যাপারে ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার (২২ জুলাই) রাতে কেরানীহাট থেকে সাইমুনের অটোরিকশা ভাড়া করে কয়েকজন যাত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে সাইমুনকে ছুরি দিয়ে পেটের নাড়ি-ভুড়ি বের করে ফেলে। পরে ছুরি দিয়ে হাত,পা ও গলার রগ কেটে দেয়ার পাশাপাশি আঘাত করা হয় পিঠেও। পরে দুর্বৃত্তরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে চলে গেলে পথচারীরা দেখতে পেয়ে প্রথমে লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার বেসরকারি হাসপাতাল পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তির পর গতকাল (বুধবার) ভোরে সে মারা যায়। ইউপি সদস্য তৌহিদ আরো বলেন, নিহত সাইমুনের চাচা ফরমান উল্লাহর সাথে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। ঘটনার আগে সাইমুনের চাচাত ভাইরা সাইমুনসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। ধারণা করা হচ্ছে, রিক্সা ভাড়া করার নাম করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাইমুনকে চুনতি নিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। এলাকায় সাইমুনের পরিবারের ভালো সুনাম রয়েছে। ছেলেটিও সৎ ছিল। এতে তার চিকিৎসার ব্যয় চালিয়ে নেওয়ার মতো পরিবারের আর্থিক অবস্থা না থাকায় স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও দানশীল ব্যক্তিরা অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিল। নিহত সাইমুনের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২২ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত যাত্রী সেজে কেরানীহাট থেকে সাইমুনের অটোরিকশায় উঠে। প্রথমে তারা ঠাকুরদিঘী যাবে বলে ভাড়া করলেও পরে কয়েক দফায় কথা বলে কৌশলে সাইমুনকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে চুনতি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানেই নির্জন স্থানে হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাত, পেট, গলাসহ শরীরের একাধিকস্থানে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ওই রাতেই চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর দীর্ঘ সময় অস্ত্রোপচার শেষে তাকে পরদিন ভোরে হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। ছেলেকে হত্যার ঘটনায় লোহাগাড়া থানায় ৩ জনকে এজাহার নামীয় ও ৩/৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করে বলে সিরাজুল ইসলাম জানান। সাইমনের বাবা সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, জায়গা-জমির বিরোধের জের ধরেই আমার ছেলেকে যাত্রী বেশে দূরে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করা হয়। আমি এ হত্যাকা-ের বিচার চাই।’ সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, 'ঘটনাস্থল যেহেতু লোহাগাড়ায়, এ বিষয়ে লোহাগাড়া থানা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তারপরেও আমরা বিষয়টির বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।