আজ মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১
নাক্ষ‍্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক

থামছেনা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ

মোঃ ইফসান খান ইমন নাইক্ষ‍্যংছড়ি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪১:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনীর  মর্টারশেল নিক্ষেপ ও সীমান্তে যুদ্ধ বিমান থেকে গোলা নিক্ষেপের প্রেক্ষিতে ভয়ে তটস্থ তুমব্রু পয়েন্টে বসবাসরত ৩'শ পরিবারকে নিরাপদে সরাতে চাচ্ছে সরকার। যাতে করে মিয়ানমারের ছোঁড়া হামলার ভয় থেকে নিষ্কৃতি পাবে সীমান্তের এসব মানুষ।

 

আর সে লক্ষ্যে সোমবার দুপুরে (বেলা ১ টায়) বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি ও বান্দরবান পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। এর আগে প্রতিনিধি দলটি 

 বেলা ১১ টায় ঘুমধুম পৌঁছে পার্শ্ববর্তী কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে যান।  সেখানে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সরানো সাড়ে ৪ শত পরীক্ষার্থীর খোঁজখবর নেন তিনি । 

পরে তিনি তুমব্রু শূণ্যরেখায় বসবাসরতদের অবস্থান 

দেখেন। আর তাদের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন। 

এ সময় শূণ্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ ও মোহাম্মদ আরেফ আহমদ জেলা প্রশাসককে বলেন, শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দিতে ২০১৮ সালের ২ মার্চ তুমব্রু সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল মিয়ানমার। তখন প্রতিদিন গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যেত। মাইকিং করে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলা হতো। নইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দিত তারা । বিজিবির তৎপরতায় তখন সেনা সমাবেশ সরিয়ে নিলেও একাধিক চৌকি স্থাপন করে রোহিঙ্গাদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছিলো তখন।তারা আরো বলেন,

 তারই ধারারবাহিকতায়  সর্বশেষ কৌশল হিসেবে তাদের ক্যাম্পে মর্টারশেল নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয় এক নিরীহ রোহিঙ্গাকে। সে ঘটনায় আহত হয় আরো ৭ জন। যারা এখনও চিকিৎসা নিচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে।

এর পর সীমান্তে ঘেঁষা বাজা বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ফাত্রাঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বাইশফাঁড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,রেজু গর্জন বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে ছাত্র ছাত্রীসহ শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন। 

 ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ এ প্রতিবেদককে বলেন,সীমান্ত পরিস্থিতি নাজুক  হয় শুক্রবার রাত থেকে। সে দিন রোহিঙ্গা মোঃ ইকবাল উদ্দিন নিহত হয়েছিলো। তখন আহত  হয় আরো কয়েকজন।

আর এর পরদিন  শনিবার থেকে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের সরানো হয় অন্যত্র। সবর্ত্র আতংক ছড়িয়ে পড়লে  নাজুক পরিস্থিতিতে  তুমব্রু থেকে  বাইশফাঁড়ি পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পাড়ার ৩ শ বাংলাদেশী পরিবারকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে  পরিদর্শনে আসেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসকরা।

 এদিকে তুমব্রু সীমান্তে পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন,সীমান্তে গোলাগুলি ও নাজুক  পরিস্থিতির কারণে এখানে বসবাসরত কিছু লোককে নিরাপদে নিতে চায় সরকার। যারা সীমান্তের অতি কাছে তাদেরকেই প্রথম দফা অস্থায়ী ক্যাম্পে নেয়া হবে। পরিস্থিতি বুঝে ক্রমান্বয়ে অন্যদেরকেও আশ্রয়ে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হবে। বিশেষ করে শূণ্যরেখায় অবস্থানরত ৯৬৬ পরিবারের ৪ হাজার ৪ শত ৪৩ জন রোহিঙ্গারকে নিরাপদে সরানোর সিদ্ধান্ত নেবেন। 

এ সময় তার সাথে  আরো ছিলেন, বান্দরবান পুলিশ সুপার  মোঃ তারিকুল ইসলাম পিপি এম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস, নাইক্ষ‍্যংছড়ি থানার অফির্সাস ইনর্চাজ টান্টু সাহা,বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য ক্যনুয়ান চাক,থানার ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজসহ ইউপি সদস্যরা।

অপর দিকে ঘুমধুমের ৩৪,৩৫,সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি জায়গা জুড়ে সকাল ৮টা থেকে কিছুক্ষণ পরপর মায়ানমারের কিছুটা ভিতর থেকে আনুমানিক ১৫টি বড় বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী মোঃ হোসেন।

অন‍্য দিকে নাইক্ষ‍্যংছড়ি সদর  ইউনিয়নভুক্ত জামছড়ি-আষারতলীর ৪৩,৪৪ নাম্বার সীমান্ত পিলারের মাঝখান দিয়ে ভোর ৬টা থেকে ৯টা পযর্ন্ত ১১টি বড় আকারের বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পান বলে জানিয়েছেন জামছড়ির স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুর  রহমান,তিনি আরো জানান মায়ানমারের ভিতরে চলে আসা গোলযোগের সময় থেকে সোমবার সকালের বিস্ফোরিত শব্দ ছিল সবচেয়ে বড়।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ‍্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন মানুষের মোখে শুনেছেন বিস্ফোরণের শব্দের কথা।