টানা তিন দিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। হোটেল-মোটেল খালি না থাকায় সৈকত ও সড়কে ঘুরছেন অনেকে। রেস্তোরাঁ, যানবাহনসহ সব জায়গায় বাড়তি অর্থ আদায় ছাড়াও নানা হয়রানির অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে লাখো পর্যটক জড়ো হয়েছেন কক্সবাজার সৈকতে। একসঙ্গে এতো পর্যটক আসায় হোটেল-মোটেলে রুম ভাড়া পাচ্ছেন না অনেকেই। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেলে রুম ভাড়া না পেয়ে ব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে বালিয়াড়িতে অবস্থান করছেন কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ সাগর তীরে অবস্থান করছেন। অনেকে হোটেল রুমের জন্য ঘুরছেন।
চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সকালে কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড়ে নামেন রাজশাহী থেকে আসা ব্যবসায়ী নবাব মিয়া (৪৫)। এরপর আশপাশের ১০-১২টি হোটেলে খোঁজ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোথাও রুম ভাড়া পাওয়া যায়নি। রাত ৮টার দিকে নবাব মিয়া বলেন, এতো লোক এখানে আসবে কল্পনাও করিনি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না।
আরেক পর্যটক জানান, গাড়ি ভাড়া, খাবারসহ সব কিছুতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। এতে পরিবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি।
সমুদ্র বাড়ি রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, গত ১০ তারিখের আগেই আমাদের সবগুলো রুম বুকিং হয়ে গেছে। আগামী ১৬ থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব কক্ষ অগ্রিম বুকিং দেওয়া আছে। নতুন কাউকে রুম দেওয়া সম্ভব নয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের এসপি জিল্লুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারের প্রায় ৫০০ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। বিজয় দিবসের ছুটি উপলক্ষে তিন দিনের জন্য শতকরা ৯০ ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং রাখা হয়েছে।
প্রতি বছর দুই ঈদ, দুর্গাপূজা ও ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ পর্যটকের ঢল নামে। তবে করোনার কারণে গত বছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ ছিল কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র। তবে আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটন শিল্প খুলে দেওয়ার পর গত ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এ সময় একদিনেই কক্সবাজারে ১০ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা, করোনার টিকা চালু হওয়ায় এ বছর পর্যটকদের ঢল আরও তীব্র হতে পারে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায়ও চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে গত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় করোনা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করেন শহরতলীর বিভিন্ন সৈকতে।