আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র

জালিয়াতির সরঞ্জামসহ আটক ৫

ইমাম খাইর, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ২০২২ ০১:৩০:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

বিশেষ পরিস্থিতিতে মানবিকবোধ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যেন ভুল হয়েছে। উদারতার খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশি জনগণ। ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী। মাদক কারবার, সন্ত্রাসী তৎপরতা তাদের একটি অংশের নিয়মিত অভ্যাসে রূপ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পে বসেই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। একাজে জড়িত দক্ষ একটি চক্র। কার্ড বানিয়ে মোটা অংকে বিক্রি করছে। আবার সুবিধা মতো নিজেরাও ব্যবহার করে থাকে। ইতোমধ্যে এসব তথ্য পৌঁছে যায় পুলিশসহ অন্যান্য আইন শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট। 

বুধবার (২০ জুলাই) রাতে উখিয়া লাম্বাশিয়া (ক্যাম্প-১ ডব্লিউ) ক্যাম্পে ৮ এপিবিএন-এর বিশেষ অভিযানে এমন একটি জালিয়াতচক্র ধরা পড়ে। 

এ সময় বিপুল পরিমাণ নকল জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সরঞ্জামাদিসহ সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের ৫ সদস্য আটক করা হয়।

তারা হলো, ব্লক-এফ/১০, ক্যাম্প- ০১ ডব্লিউ এর মোঃ ইসলামের ছেলে মোঃ আবদুল্লাহ (৩৭), ব্লক- এফ/১০, ক্যাম্প-০১ ডব্লিউ (এফসিএন নং-১৩৪৩৯১) এর মুসা খলিলের ছেলে আবুল খায়ের (১৮), ব্লক- এফ/১৩, ক্যাম্প ০১ ডব্লিউর (এফসিএন নং-১৩৮৫০৭) হাবিবের ছেলে মোঃ ত্বালহা (৬০), তার ভাই মোঃ হারুন (৩৬, এফসিএন নং ১৩৮৫১০) এবং টেকনাফ শাহপুরি দ্বীপের ৯ নং ওয়ার্ড উত্তর পাড়ার সৈয়দ হোসেনের ছেলে মোঃ ইসমাইল (৪৫)।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: কামরান হোসেন।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি চক্র বাংলাদেশের নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সাধন করছে, এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে ৮ এপিবিএনের কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খানের নির্দেশনায় লাম্বাশিয়া ক্যাম্পের মোঃ আবদুল্লাহর বসতঘরে অভিযান পরিচালনা করে।

 

এ সময় বিপুল পরিমাণ নকল জাতীয় পরিচয়পত্র, নকল জন্ম নিবন্ধন সনদ, নকল ড্রাইভিং লাইসেন্স, নকল এনআইডি তৈরির কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, পেনড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিসহ জালিয়াত চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করা হয়।

 

জব্দকৃত সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে, ৪ টি ল্যাপটপ, ৮টি স্মার্টফোন, ৪টি পেনড্রাইভ, ২টি স্ক্যানার+প্রিন্টার, ২৮টি অনলাইন ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন রেজিষ্ট্রেশন, ১১ টি জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই, ৩০ টি ডুপ্লিকেট জন্মসনদ, ২০টি ডুপ্লিকেট এনআইডি, ২০০ ব্যক্তির এনআইডির ফটোকপি, ২০টি ডুপ্লিকেট এনআইডি, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের চেক বই ও জমা দেওয়ার বই, ৫টি সিল, ১টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন সনদপত্র, শাহপুরি বাস্তহারা আদর্শ গ্রাম সমবায় সমিতি লিঃ এর ২০টি সদস্য ফরম, টাকা জমা দেওয়ার ৩৫ টি পাশ বই, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৮টি ট্রেড লাইসেন্স (যার প্রত্যেকটিতে মোঃ আবদুল্লাহ নামে লিপিবদ্ধ), রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের জাতীয়তা সনদসহ আরো বিভিন্ন নামের ৪টি জাতীয়তা সনদ, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ টি ভূমিহীন সনদ, আবদুল্লাহ নামের ইলেক্ট্রিক বিলের কাগজপত্র, বিভিন্ন ধরণের জায়গা জমির দলিল ও খতিয়ান, মোঃ ইসমাইলের জন্ম সনদ ও আইডি কার্ড, মোঃ ত্বালহার সিটি কর্পোরেশনের জাতীয় সনদ, জন্ম সনদ এনআইডি (নকল) ও মোঃ হারুনের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।

 

সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে অভিযানকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম, খন্দকার আশফাকুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরান হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

 

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জালিয়াত চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে নকল বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে আসছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মূলত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ এবং বিদেশে গমনের জন্য পাসপোর্ট তৈরির লক্ষ্যে উক্ত দালাল চক্রকে মোটা অংকের টাকা প্রদান করে।

 

বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে অসাধুচক্রের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে মনে করছেন ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: কামরান হোসেন।