আজ বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫শে পৌষ ১৪৩১
মিরসরাইয়ে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষের জের

জামায়াতের কার্যালয় ও কর্মী-সমর্থকদের ৬টি দোকানে দেওয়া তালা খোলা হয় ১৯ ঘন্টা পর

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ১০:০৪:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে বিএনপি জামায়াতের সংঘর্ষের জের ধরে জামায়াতের কার্যালয় ও দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে বিএনপির লোকজন। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। জামায়াত নেতাকর্মীদের অভিযোগ দোকানে তালা দেয়ার আগে তাদের মারধর করে বাজার থেকে তাড়িয়ে দেয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বেলা ১টায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জোরারগঞ্জ বাজারে গিয়ে ছয়টি দোকান ও জামায়াতের ইউনিয়ন কার্যায়ের তালা খুলে দেন।

ভুক্তভোগী জামায়াতের কর্মী-সমর্থক ব্যবসায়ীরা জানান, জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বালু ভরাটের কাজ ভাগাভাগি নিয়ে সোমবার দুপুরে জোরারগঞ্জ বাজারে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মাসুকুল আলম সোহান ও জামায়াতের সমর্থক জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মাসুকুল আলম সোহান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রæপ করেন। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের পাঁচজন নেতা কর্মী আহত হন। সেই ঘটনার জের ধরে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি'র নেতাকর্মীরা জোরারগঞ্জ বাজারে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতের কার্যালয় ও জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ীদের ছয়টি দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। তার আগে ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে ও হুমকি দিয়ে বাজার ছাড়া করা হয়। তালা দেয়া ছয়টি দোকান হচ্ছে, আনোয়ার হোসেনের বেড় তোশকের দোকান মো. শরীফের ওয়ার্কশপ শাহানেওয়াজের কনফেকশনারী দোকান, মোহাম্মদ নবী ও সোহেলের আসবাব তৈরির দোকান ও মো. ইউসুফের রড় সিমেন্টের দোকান। 

বিএনপি নেতাকর্মীরা দোকান বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ বাজারে বেড তোশকের দোকানদার ও জামায়াতের সমর্থক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সোমবার দুপুরে জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বালু ভরাটের কাজ নিয়ে জামায়াত-বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বাজারে মারামারি হয়। সেই ঘটনার জেরে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দল বেঁধে এসে ওদের দোকানপাটে হামলা করে। আমাদের মারধর করে এক পর্যায়ে ইউনিয়ন জামায়াত কার্যালয় ও জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ীদের ছয়টি দোকান তালা লাগিয়ে দেয় একই সাথে তারা আমাদের বাজার থেকে বিতাড়িত করে। আমরা জামায়াত সমর্থন করি কিন্তু আমাদের মূল পরিচয় ব্যবসায়ী। সকল রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক আছে। এভাবে দোকানে তালা দেয়া নজিরবিহীন। 

জোরারগঞ্জ থানা জামায়াতের আমির মাওলানা নুরুল হুদা হামিদী বলেন, সোমবার জোরারগঞ্জ বাজারে ঠিকাদারি কাজ নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির কিছু লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ঘটনার জের ধরে সোমবার সন্ধ্যায় জোরারগঞ্জ বাজারে আমাদের দলীয় কার্যালয় ও জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করে দেয় বিএনপির লোকজন। এ বিষয়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা মঙ্গলবার দুপুরে দোকানপাট ও দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মাসুকুল আলমের ফোনে বারবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, ‘সোমবার দুপুরে জোরারগঞ্জ বাজারে বিএনপি ও জামায়াতের দুটি পক্ষের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। আমি এলাকায় থাকলে এটি হতে দিতাম না। এ ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যায় বিএনপির অতি উৎসাহী কিছু লোক জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ীদের কয়েকটি দোকানে তালা দিয়েছেন। যারাই এ কাজ করেছে, তারা মোটেও ঠিক করেনি। আমি মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে বাজারে গিয়ে দোকানগুলোর তালা খুলে দিয়েছি।’

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম সিফাতুল মাজদার বলেন, সোমবার দুপুরে জোরারগঞ্জ বাজারে সংঘর্ষ ও সন্ধ্যায় বাজারের জামায়াত সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দোকানে তালা দেওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।