মারুফ হাটহাজারীর কেএস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে কাজ করার। এজন্য স্কুলের বিএনসিসিতেও যোগ দিয়েছিল। কিন্তু সে ইচ্ছা আর পূরণ হলো না। কারণ, গতকাল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহতদের মধ্যে মারুফ একজন।
এদিকে ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে বড় ছেলে মারুফকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা কামরুন নাহার। ছেলের ছবি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের কাগজ ও পড়ালেখার বিভিন্ন সনদ হাতে নিয়ে তিনি বলছিলেন, আমার ছেলে সেনাবাহিনীতে কাজ করতে চেয়েছিল। কাজ করে আমার কষ্ট দূর করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, শুক্রবার যখন ঘুরতে বের হয়েছিল, তখনও আমি না করেছিলাম। জোর করে রেখে দিলে আমার ছেলেটা বেঁচে যেত। যাওয়ার জন্য তাকে কোনো টাকাও দেইনি।
ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে কামরুন নাহার বলেন, মারুফ আমার বড় ছেলে। চাকরি করে সে আমার অভাবের সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু এখন আমাদের কী হবে।
মেয়ের পাশে বসেই কান্না করছিলেন মারুফের নানী নুর নাহার বেগম। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই মারুফের বাবা পরিবারের খোঁজ নেয় না। অনেক কষ্ট করে নাতিকে মানুষ করেছি। মারুফ বলত, বড় হয়ে চাকরি করে আমার দেখাশোনা করবে। আমার মেয়ের আর কেউ রইল না। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, মারুফের মাকে যেন সহযোগিতা করে।
শনিবার (৩০ জুলাই) সকালে হাটহাজারীর খন্দকিয়া এলাকার মারুফের নানা বাড়িতে স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। কেউ কেউ মারুফের মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মারুফ সবার বড়।
মারুফের মামা হানিফ বলেন, মারুফ আমাদের বাড়িতে বড় হয়েছে। সে যে ঘুরতে যাবে তা জানতাম না। জানলে তাকে যেতে দিতাম না। মারুফের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আমরাই তাকে কষ্ট করে মানুষ করেছি। মারুফ স্বপ্ন দেখত, সেনাবাহিনীতে কাজ করবে। কিন্তু কী হতে কী হয়ে গেল।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। আহত হন আরও ছয় জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় গেটম্যান সাদ্দামকে আটক করে পুলিশ।