প্রতি মৌসুমেই সংকট দেখিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পাঁয়তারা শুরু করে চিহ্নিত একটি চক্র। তাার মোটা অংকের মিশনে নামে। ভূয়া মিল মালিকরা হাতিয়ে নেয় কোটি টাকা। মারা পড়ে দেশীয় লবণশিল্প। উৎসাহ হারায় প্রান্তিক চাষিরা। এই মৌসুমে লবণ আমদানি আর হচ্ছে না। এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রণালয় ও বিসিকের নীতি নির্ধারণী সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সুসংবাদে খুশি চাষিরা। অনাবাদি জমিকেও চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করেছে তারা। ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া, পেকুয়া, টেকনাফসহ বেশ কিছু এলাকায় লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। আবাদ হচ্ছে নতুন জায়গা। লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জাফর ইকবাল ভূইয়া জানিয়েছেন, লবণের ন্যায্য মূল্য না থাকায় অনেক চাষযোগ্য জমি অনাবাদি ছিল। এবার সেসব জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে। ইতোমধ্যে জমি প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দিয়েছে চাষিরা। তাদের উদ্ভুদ্ধও করা হচ্ছে। এই মৌসুমে ৫ থেকে ৭ হাজার একর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর লবণের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সভা করেছে বিসিক। সেখানে কক্সবাজারের বাজার পরিস্থিতিসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ডিজিএম মো. জাফর ইকবাল ভূইয়া। এর আগে ৭ নভেম্বর জাতীয় কমিটির সভায় লবণের চাহিদা নিরুপন, উৎপাদন, মজুদসহ সার্বিক পরিস্থিতির কথা ওঠে আসে। দুই বৈঠকেই লবণ আমদানি না করার পক্ষে কথা আসে। নীতি নির্ধারকরাও তাতে একমত হয়েছেন। বিসিকের পরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. ইদ্রিস আলীর দেয়া তথ্য অনুসারে, গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৩,৯৫০ মে.টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন এলাকায় উৎপাদন বাড়ছে। ২০২২-২০২৩ মৌসুমে দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয় ২৩ লক্ষ ৮৫ হাজার মে.টন। আগের বছর ২০২১-২০২২ মৌসুমে চাহিদা ছিল ২৩ লক্ষ ৩৫ হাজার মে.টন। এক বছরে চাহিদা বেড়েছে ৫০ হাজার মে.টন। ২০২০-২০২১ মৌসুমে লবণ জমির পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর। গেল মৌসুমের হিসেব মতে, লবণ উৎপাদনকারী/চাষি সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৩১ জন। লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লক্ষ ৩২,০৩৬ মে.টন। এখানে একটি তথ্য হলো- গত বছর সরকারিভাবে আমদানি হয় দেড় লক্ষ মে.টন। আগের বছর মজুদ থাকে ১ লক্ষ মে.টন। তবে, ওই বছর সাড়ে ১৭ কোটি জনগণ হিসেবে চাহিদা ধরা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ আদমশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। কমেছে দেড় কোটি। সে কারণে চাহিদা ও উৎপাদনে ফারাক থাকলেও সংকট পড়ে নি। এ বছর লবণ উৎপাদনে রেকর্ড হবে বলে আশা চাষিদের।