চট্টলবীর মজিউদ্দিন চৌধুরীর ৭৭ তম জম্মদিন আজ। মহিউদ্দীন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম। ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত ৩:৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যান।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র চট্টলবীর আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমৃত্যু মানব কল্যাণে কাজ করে একজন গণমানুষের নেতা হিসেবে সকলের মণিকুঠায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। অদম্য এই রাজনীতিবীদ কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। ২০০৫ সালের চসিক মেয়র নির্বাচনে তিনি তৎকালিন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কয়েক দফায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নগর পিতার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত ৩:৩০ মিনিটে ৭৩ বছর বয়সে তিনি হৃদরোগ, কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। মেধা-মনন, সততার প্রতিক, ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান এই নেতার আজ বড়ই প্রয়োজন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ক্ষমতা মোহের উর্ধ্বে যিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর রাজনীতি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী, সৃষ্টিধর্মী ও সেবাধর্মী। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সিটি মেয়র থাকার সময় এ শহরে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন, অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন। এছাড়া জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ব্যাপক কাজ করার পাশাপাশী তিনি শ্রমিক আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বর্ষীয়ান এ নেতা চট্টগ্রামকে এতটাই ভালোবাসতেন যে ১৯৯৮ সালে জাপান গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য তিনি কী-কী করেছেন। চট্টগ্রামের স্বার্থে বন্দর ও এয়ারপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা করতেও দ্বিধা করেননি তিনি। মেয়র থাকাকালীন চট্টগ্রামের কোনো প্রকল্প নিয়ে একনেকে তদবির করতে যাননি। তিনি নিজের উদ্যোগে উন্নয়ন কাজ করতেন। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের মেয়র হয়েছিলেন বীর চট্টলার গণমানুষের নেতা ছিলেন বলে। তিনি মেয়র থাকার সময় দোকানের ছোট-ছোট সাইনবোডের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষে কোনো ট্যাক্স নিতেন না। গরীব রিকশা চালকের রিকশার লাইসেন্স নবায়নের জন্য কোনো টাকা নিতেন না। এভাবেই তিনি সেবাধর্মী রাজনীতি করেছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে টানা তিনবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জনপ্রিয় এই সাবেক মেয়রের বাড়ি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ষোলো শহরের চশমা হিলে। তাঁর বাসার গলিটি চট্টগ্রামবাসীর কাছে ‘মেয়র গলি’ হিসেবে পরিচিত। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পাকিস্তান আমলে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকায়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশ শত্রু মুক্ত করার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের পর দলের অস্তিত্ব ধরে রাখায় বার-বার শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েছিলেন।