ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভা এবং ১৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-২ আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য চৌদ্দ দলীয় জোটের অন্যতম শরীকদল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। ফটিকছড়িতে ‘ভান্ডারি’ হটাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন বর্তমান চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। এবারও তাঁর ইচ্ছে ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। তবে পদ না ছাড়লেও নৌকার টিকিট কেটেছিলেন তিনি। তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌঁড়ে ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন মুহুরীসহ অনেকে। এবার সবাইকে ‘টেক্কা’ দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ফটিকছড়ির সাবেক এমপি কন্যা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। এ আসনে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রফিকুল আনোয়ার চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন তুলে দেয় আওয়ামী লীগ। তখন ফটিকছড়ির মানুষের কাছে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত রফিকুল আনোয়ারের গ্রহণযোগ্যতা ছিল তুঙ্গে। প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিকে হারিয়ে রফিকুল আনোয়ার জয়ী হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিকূল সময়েও তিনি ফটিকছড়িকে এই আসনটি উপহার দেন। এরপর ওয়ান ইলেভেনে অনেক রাজনীতিকের মতো রফিকুল আনোয়ারের ওপরও নেমে আসে খড়গ। এ কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। ২০১২ সালে মারা যান এই নেতা। এবার তাঁর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন তাঁরই মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। যিনি বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে, গত রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এদিকে ফটিকছড়িতে দলীয় নানা বিভেদ থাকলেও নির্বাচন ঘিরে ‘ভান্ডারি হটাতে’জোটবদ্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগ। আগে প্রকাশ্যে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য থাকলেও এখন অনেকটাই কাদা ছোঁড়াছোড়ি বন্ধ। কয়েক বছর ধরে আসনটি উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছিলেন স্থানীয় নেতারা। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকার পাল তিনি ওড়াতে পারছেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জোটের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত। কেননা তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আসনটির জন্য অনড় রয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। যদিও ভান্ডারির ‘পাতে’ হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনিও ফটিকছড়ির খুব পরিচিত মুখ। এবার নির্বাচন করবেন তিনি। কোনো কারণে নজিবুলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব থেকে গেলে শেষ হাসি হাসতে পারেন সাইফুদ্দীন।
এদিকে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি মনোনয়ন পাওয়ার খবর ফটিকছড়িতে ছড়িয়ে পড়লে রবিবার রাতে উল্লাসে ফেটে পড়েন দলীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার খুশিতে তাৎক্ষণাৎ বের করা হয়েছে আনন্দ মিছিল। মিছিলটি উপজেলা সদর বিবিরহাটের গুরুত্ব সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন- ফটিকছড়ি পৌর মেয়র ইসমাঈল হোসেন, সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জসিম উদ্দিন, নাজিরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসাইন শহীদ জাফর আলম,উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন ও সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ রায়হান রুপু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. লোকমান উদ্দিন প্রমুখ। এসময় বক্তরা, দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনীত করার জন্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। আনন্দ মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এছাড়াও মিছিল বের করা হয় উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নে। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে আগত নেতা-কর্মীদের মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছাড়াও উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসাধারণের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সনি। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীকের নমিনেশন দিয়েছিলেন। সেবার জোটের কারণে আমি নমিনেশন প্রত্যাহার করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমাকে মহিলা সাংসদ মনোনীত করে বিশেষভাবে ফটিকছড়িতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সেই দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠার সাথে পালন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে দিন রাত পরিশ্রম করেছি। প্রধানমন্ত্রী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হতে নৌকা প্রতীকের নমিনেশন উপহার দিয়েছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ফটিকছড়ির আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।