চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মিরসরাইয়ের কয়েকটি মাদরাসার নামে ভুয়া আবেদন করে চাউল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের সদস্য মো. ইলিয়াছ শরীফ (৩২) নামে একজনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আটক করে মিরসরাই থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর গ্রামের মৃত মো. ইউসুফ শরীফের ছেলে। এঘটনায় তার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মিরসরাই থানায় একটি মামলা (নং-৯) দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে গত ১২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মিরসরাইয়ের ১৫টি মাদরাসার জন্য ১টন করে ১৫ টন চাউল বরাদ্দ করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আবেদনে থাকা মোবাইল নাম্বারে কল দিলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এসে চাউল উত্তোলন করে নিয়ে যায়। তালিকায় থাকা বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মুমিন (রাঃ) মহিলা এতিমখানার নামে বরাদ্দকৃত চাউল মো. ইলিয়াছ শরীফ নামে একজন উত্তোলন করার খবর পেয়ে মাদরসার পরিচালক মঙ্গলবার বিকেলে অফিসে এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, তালিকায় থাকা বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মুমিন (রাঃ) মহিলা এতিমখানা, আনজুমান নাহার মহিলা এতিমখানা, জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদরাসা, মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার নাম দিয়ে প্রতারণা করে চাউল উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া আনজুমান নাহার মহিলা এতিমখানা নামে মিরসরাইতে কোন প্রতিষ্ঠানও নেই।
বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মুমিন (রাঃ) মহিলা এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাদের মাদরাসার নামে ১ টন চাউল বরাদ্দ হওয়ার খবর শুনে আমি মঙ্গলবার উপজেলা পিআইও অফিসে যোগাযোগ করি। সেখানে গিয়ে দেখি গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর মোঃ ইলিয়াছ শরীফ নামে একজন মাদরাসার পরিচালক সেজে চার মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদনপত্রে ব্যবহৃত প্যাডটি আমাদের মাদরাসার নয়। তাছাড়া আবেদন সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ১ টন চাউল বরাদ্দ দেন। পরবর্তীতে ইলিয়াছ শরীফ নিজে গত ১৬ সেপ্টেম্বর উক্ত চাউল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এঘটনায় যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) মিরসরাই উপজেলা সভাপতি মাওলানা জমির উদ্দিন বলেন, আমার পরিচালনাধীন জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদরাসা এবং মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার নাম দিয়েও প্রতারক চক্রটি ২ টন চাউল আত্মসাৎ করে ফেলেছে। আবেদন সম্পর্কে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না। বুধবার পিআইও অফিসে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানায়; আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রতারক চক্র থেকে আত্মসাতকৃত চাউল অথবা টাকা উদ্ধার করে আমাকে বুঝিয়ে দেবেন। না হয় প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
মিরসরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসের অফিস সহকারী সোহাগ আহমেদ বলেন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের মাধ্যমে মিরসরাই উপজেলার ১৫ টি হেফজখানা এবং এতিমখানা মাদরাসার জন্য ১৫ টন চাউল বরাদ্দ আসলে আমি আবেদনে দেওয়া নাম্বারে কল দিই। সে অনুযায়ী মাদরাসার প্রতিনিধিরা ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর চাউল উত্তোলন করে নিয়ে যান। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বারইয়ারহাট উম্মাহাতুল মুমিন (রাঃ) মহিলা এতিমখানার পরিচালক মাওলানা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন তাঁর মাদরাসার নামে বরাদ্দকৃত চাউল তিনি পাননি। এটি শোনার পর চাউল উত্তোলনকারী মোঃ ইলিয়াছ শরীফকে কল দিয়ে অফিসে আসতে বলা হয়। সন্ধ্যায় মোঃ ইলিয়াছ শরীফ অফিসে আসলে তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে তিনি প্রতারণার মাধ্যমে চাউল উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
তিনি আরো বলেন, চাউল বরাদ্দ হওয়া আরো কয়েকটি মাদরাসার নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সেগুলোও বন্ধ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি আরো কয়েকটি মাদরাসার নামে বরাদ্দকৃত চাউল উত্তোলন করে ফেলেছে।
গ্রেপ্তারকৃত মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, আমার বড় বোন আনজুমান আক্তার এর পরামর্শে আমি পিআইও অফিসে গিয়ে সাক্ষর করি এবং করেরহাট খাদ্য গুদাম থেকে ১ টন চাউল নিয়ে আসি। এজন্য আমাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছিলো আমার বোন।
মিরসরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জামিরুল ইসলাম বলেন, প্রতারক চক্রটি ৪টি মাদরাসার নামে ভুয়া আবেদন করে ৪ টন চাউল উত্তোলন করে ফেলেছে। ইতমধ্যে প্রতারক চক্রের একজনকে আটক করে থানায় দেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা আনজুমান নাহার মহিলা এতিমখানা নামে বরাদ্দকৃত চাউল উত্তোলন কারী আনজুমান আক্তার মুছলেকা দিয়ে ৫২ হাজার টাকা বুধবার সকালে অফিসে ফেরত দিয়ে গেছেন। জামেয়া ছকিনা-আয়েশা মাদরাসা, মোহাম্মদীয়া আজিজুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানার নামে যিনি চাউল নিয়ে গেছেন তাকে আজকের (বুধবার) মধ্যে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। যদি না দেয় তাহলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাদের বলেন, প্রতারণা করে চাউল আত্মসাতের সাথে জড়িত ইলিয়াছ শরীফ নামে একজনকে আসামী করে পিআইও অফিস সহকারী সোহাগ আহমেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে বুধবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ভুয়া আবেদন করে চাউল আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত ইলিয়াছ শরীফ নামে একজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। এছাড়া জড়িত বাকীদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পিআইও অফিসকে বলা হয়েছে।