- জাতীয় শিক্ষক দিবসে ৪ কলেজের ২৪ জন শিক্ষক নাজেহাল ও অবরুদ্ধ
- কলেজ কেন্দ্র বাতিল চেয়েছেন সচেতন মহল
- ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে ভবিষ্যতে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা
শিক্ষকেরা হলেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নের আর্কিটেক্ট। তাদের
অবদান জীবন চলার পথে অনস্বীকার্য। যে শিক্ষকেরা জ্ঞানের সঠিক পথ দেখায়, জীবনে উন্নত হতে ও সাফল্যের চুড়ায় পৌঁছাতে সাহায্য করে সেই শিক্ষক বিশ্ব শিক্ষক দিবসের দিনে শিক্ষার্থীর হাতে নাজেহাল ও অবরুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার এইচএসসি ইংরেজি ২য় পত্রের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা না দেয়ার কারণে দায়িত্বরত কক্ষ
পর্যবেক্ষক শিক্ষককে পরীক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করেন। শিক্ষক অবরুদ্ধের খবর পেয়ে সঙ্গীয় পুলিশ টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের উদ্ধার করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত উজ জামান।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার পর পরীক্ষার্থীরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটায়।
অবরুদ্ধ শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে চকরিয়া সরকারি কলেজের ৯ জন, চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজের ৬ জন, সিটি কলেজের ৬ জন ও কর্মাস কলেজের ৩ জন শিক্ষকসহ ২৪ জন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম কর্তৃক এইচএসসি পরীক্ষার নির্ধারিত তারিখ মোতাবেক বৃহস্পতিবার ছিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষার দিন। ওইদিন উপজেলার ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরীক্ষা কেন্দ্রে তিনটি কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ২৪ জন শিক্ষক কক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত কলেজ কেন্দ্রে শুধুমাত্র ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করেন। তাদের পরীক্ষা গ্রহণে দায়িত্বরত শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের অসৎ উপায় অবলম্বল ও অনৈতিক কাজে বাধা দেয়। পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের কোন ধরণের সুযোগ-সুবিধা না দেয়ায় কারণে কলেজের শিক্ষার্থীরা দায়িত্বরত কক্ষ পর্যবেক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে যান। পরীক্ষা শেষে ও জাতীয় শিক্ষা দিবসে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে
অসৌজন্যমূলক আচরণ, হুমকি-দমকি দিয়ে কলেজ কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে দ্রুত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত উজ জামান নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের নিরাপদে গন্তব্যে সরিয়ে আনেন বলে জানা গেছে।
চকরিয়া সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জানান, পরীক্ষার শুরু থেকে শিক্ষাথীরা নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা চালায়। তাদের অনৈতিক কাজে বাধা দেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দেয়ার পর সকল শিক্ষাথীরা জড়ো হয়ে নানা হুমকি-ধমকি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকে। তারা নিরাপদ আশ্রয় নিতে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। অথচ কেন্দ্রে কলেজ কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করে। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রশাসনকে খবর দেয়া হলে দ্রুত এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করেন।
এদিকে, বিশ্ব জাতীয় শিক্ষক দিবসের দিনে ডুলাহাজারা পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের এহেন ঘটনার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক ও সচেতন মহল। তাদের দাবী, যে কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সম্মান দিতে জানে না, ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকিসহ অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারে এধরণের নিন্দনীয় ঘটনার জন্য দায়ী হিসেবে উক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রটি বাতিল চেয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করা এক প্রভাষক বলেন, ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের যে অশালীন আচরণ তা কখনো শুভকর নয়। ২০২৪ সাল থেকে ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে কোন শিক্ষকও কক্ষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে যাবেন না।
ডুলাহাজারা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যথটুকু জানি চকরিয়া কলেজ, মহিলা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষকেরা মিলে এখান থেকে কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য এটি ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের এ ঘটনা নিয়ে কোন ধরণের নিরব ভূমিকা ছিলনা। কলেজের বর্তমান দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে উত্তম কুমার চৌধুরী।
ঘটনার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এখনো কলেজের দাযিত্ব গ্রহণ করি নাই। আগামী ৯ তারিখের মিটিংয়ের পরে দায়িত্ব দেযার কথা রয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাইনি।
চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাহাত উজ জামান জানান, ডুলাহাজারা কলেজর পরীক্ষা কেন্দ্রে গন্ডগোলের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়। মূলত শিক্ষকেরা অবরুদ্ধ ছিলনা। শিক্ষার্থীরা ঘটনা করবে এমন আশংকায় ছিলেন শিক্ষকেরা। পরীক্ষায় দায়িত্বরত সকল শিক্ষকদের নিরাপদ গন্তব্যে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে তিনি জানান।