আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

খাদ্য সহায়তা কমানোর খবরে হতাশ রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ০৬:০১:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

তহবিলে অর্থ সংকট দেখা দেওয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এমন খবর শোনার পর হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বার্তা সংস্থা এএফপিকে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানিয়েছেন, সহায়তা কমানোর প্রভাব হবে ‘বিধ্বংসী’।

গতকাল শুক্রবার ডব্লিউএফপি প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার পরিমাণ কমানোর ঘোষণা দেয়। সংস্থাটি জানায়, রোহিঙ্গাদের আগামী মার্চ থেকে মাসিক ভাতা ১২ ডলারের বদলে ১০ ডলার করে দেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য যে তহবিল গঠন করা হয়েছে সেখানে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাদের।

 

 

ডব্লিউএফপি বলছে, যদি তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে, তাহলে এপ্রিল থেকে সহায়তার পরিমাণ আরও কমবে।

২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জ্বালাও-পোড়াও, খুন, ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। এরপর থেকেই তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘের এই সংস্থা।

সহায়তার পরিমাণ কমানোর খবর শুনে রোহিঙ্গা নেতা সায়েদুল্লাহ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্বের নজর কমছে।’

 

‘কিন্তু ডব্লিউএফপি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয়ের পথ সুগম হবে।’

সলিমুল্লাহ নামের অপর এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, সহায়তার পরিমাণ কমানোর বিষয়টি শরণার্থী শিবিরে অপরাধ বাড়িয়ে তুলবে। যাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নারী ও শিশুরা।

‘এটি হবে বিধ্বংসী এক আঘাত। শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসবাদ, মাদক এবং মানবপাচার বৃদ্ধি পাবে,’ বলেন সলিমুল্লাহ।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চনের রাখাইনে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধ রক্তাক্ত সামরিক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। সেই সময় একসঙ্গে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তারা বাংলাদেশে এসে হত্যা, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান।

বর্তমানে এসব রোহিঙ্গাকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অন্যত্র পুনর্বাসন অথবা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে পাঠাতেও পারছে না সরকার।

যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করেন তাদের বাইরে কোথাও কাজ করার সুযোগ নেই। ফলে বেঁচে থাকতে তারা পুরোপুরি মানবিক সহায়তার ওপরই নির্ভরশীল।

ডব্লিউএফপি বলছে, শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি ৮ জনের একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। এছাড়া গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো ৪০ শতাংশ মা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, উন্নত জীবনের আশায় শরণার্থী শিবির থেকে অনেক রোহিঙ্গা এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে অন্য কোনও দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যার মধ্যে গত বছরই এমন ঝুঁকি নিয়েছেন প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা। 

ধারণা করা হয়, সাগর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ রোঙ্গিা প্রাণ হারিয়েছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন।