• গবেষণা মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ লাখ ক্যান্সার রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে
• প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর জুন মাস ‘ক্যান্সার সারভাইভার মান্থ’ হিসেবে পালিত হয়। এবছরও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে মাসটি। মাসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে এবং প্রাথমিক রোগ-নির্ণয় নিশ্চিতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন্দরনগরীর সর্ববৃহৎ হাসপাতাল, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম, একটি ক্যান্সার সারভাইভার ফোরাম উদ্বোধন করেছে।
ক্যান্সার সম্পর্কিত অনলাইন ডাটাবেজ গ্লোবোক্যানের একটি তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৮ লাখ ক্যান্সার রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে ৫২ শতাংশ পুরুষ রোগী এবং ৪৮ শতাংশ নারী। প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।
দেশে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার মধ্যে ৯০-৯২ হাজার রোগীই মৃত্যুবরণ করছেন। অন্য একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গত এক বছরের ব্যবধানে (২০২১-২০২২) চট্টগ্রামে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ, যাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম-বয়সী বা মধ্যবয়স্করা আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত সচেতনতা, সময় মতো রোগ নির্ণয় ও আধুনিক চিকিৎসা-সেবার অভাব আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম এই ক্যান্সার সারভাইভার ফোরাম-এর মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্তদের মনোবল বৃদ্ধি, সঠিক চিকিৎসা এবং সাধারণ মানুষদের প্রাথমিক রোগ-নির্ণয় ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে কাজ করবে।
উক্ত আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সানশাইন এডুকেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং আইইউবি ও সিআইইউ-এর ট্রাস্টি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাফিয়া গাজী রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর মহাব্যবস্থাপক ডা. ফজলে আকবর; মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর; মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ। পেশেন্ট ফোরামে চিকিৎসকবৃন্দ ক্যান্সারের বিভিন্ন খুঁটিনাটি সম্পর্কে মত বিনিময় ও আলোচনা করেন এবং ক্যান্সার সারভাইভাররা তাদের জীবনের ভয়াল অভিজ্ঞতা ও এর থেকে উত্তোরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি, সানশাইন এডুকেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং আইইউবি ও সিআইইউ-এর ট্রাস্টি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, “ক্যান্সার বিষয়ে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। শরীরের যেকোনো পরিবর্তন মনে হলে তা গুরুত্ব দিয়ে খেয়াল করতে হবে। আমাদের সবসময় ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চলতে হবে। আমরা ইচ্ছা করলেই জয়ী হতে পারবো। আমরা হেরে যেতে চাই না।” সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে এভারকেয়ার হাসপাতালের এমন উদ্যোগের প্রশংসাও করেন তিনি।
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “প্রায় ৯০% ক্যান্সার ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে এবং বাকি ১০% হয় বংশানুক্রমে। অর্থাৎ, জিনের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে ক্যান্সার হতে পারে। শুরুর দিকে ক্যান্সারের উপসর্গগুলো সনাক্ত করা খুব একটা সহজ নয়, যা এই রোগকে মরণব্যাধিতে রুপান্তরিত করেছে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ সতর্ক থাকা, সচেতন থাকা, নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করা এবং অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা পরিত্যাগ করা।
এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর মহাব্যবস্থাপক ডা. ফজলে আকবর বলেন, “বয়স্ক পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ‘পিএসএ’, ট্রান্সর্যাক্টর আল্ট্রাসনোগ্রাফি ইত্যাদি এবং নারীদের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ম্যামোগ্রাফি ও প্যাপ স্মিয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। পাশাপাশি উন্নতমানের ডায়াগনস্টিক, হিস্টোপ্যাথলজি সুবিধাও প্রয়োজন হয়। এসবের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ও এর সঠিক স্থান নির্ণয় করা সম্ভব এবং এই সুবিধাগুলো এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এ আছে। সনাক্তের পর প্রয়োজনে কিমোথেরাপি প্রদানের জন্য আমাদের অভিজ্ঞ মেডিকেল অনকোলজিস্টস আছেন এবং আমরা আগামী ২/১ মাসের মধ্যেই আমরা রেডিয়েশন অনকোলজি চালু করতে যাচ্ছি, যা চট্টগ্রামবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে একটি সুখবর।”
ক্যান্সার সারভাইভার ফারহানা মুস্তাফা বলেন, “দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসাই পারে ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে। বর্তমানে আমি সুস্থভাবে জীবনযাপন করছি এবং এর পিছে এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। চট্টগ্রামবাসী অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, অভিজ্ঞ চিকিৎসক, উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি, আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল আমাদের রয়েছে। আমি আশা করি, আমাদের দেখে সকলের আরও সচেতন হবেন এবং অন্যকে সচেতন করে তুলবেন।”