আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কী আছে ডা. মুরাদ হাসানের ভাগ্যে?

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১১ মে ২০২২ ১০:৩২:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান। চলতি মেয়াদে দায়িত্ব সামলেছেন প্রতিমন্ত্রীর। বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছিল না কিছুতেই। নানান ইস্যুতে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর-৪ থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য। এক পর্যায়ে নারীঘটিত কেলেঙ্কারিসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে হারিয়েছেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ। প্রতিমন্ত্রীর পদও ছাড়তে বাধ্য হন ডা. মুরাদ। তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।

এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কী সিদ্ধান্ত নিলো কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ? এমন প্রশ্ন সবার। কিন্তু গেলো ৭ মে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি ।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নারী ও সংবিধান নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং সবশেষ নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে আপত্তিকর অডিও ভাইরাল হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে গত ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ডা. মুরাদ হাসান। ওইদিনই জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ তাকে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। পরদিন ৮ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও আওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় ডা. মুরাদ হাসানকে।

অব্যাহতির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জামালাপুর জেলা শাখার স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. মুরাদ হাসানকে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারা মোতাবেক অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পাঠানো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’

করোনাসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিয়মিত সভা হয়নি। যে কারণে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘ ছয়মাস পর গেলো ৭ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হয়েছে। এতে ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। যে কারণে সিদ্ধান্তও হয়নি। 

তাহলে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে কার্যনির্বাহী সভায় কোনো আলোচনাই হয়নি।’

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘এটি সভায় উত্থাপিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’

তবে, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, নীলফামারী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সুপারিশের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের শোকজ করে, তাদের জবাবসহ (বক্তব্য) কেন্দ্রে পাঠাতে বলা হয়েছে। তারপর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া কোনো জেলার বহিষ্কার বা অব্যাহতির বিষয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আসেনি। কোনো সিদ্ধান্তও নেই।

এ বিষয়ে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রে পাঠিয়েছি।’

কেন্দ্র থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। কেন্দ্র থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ৭ মে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানি না।’

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (৯) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংগঠনের যে কোনো শাখা তাহার যে কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যকে দলের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের জন্য স্ব-স্ব পদ বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন শাখার প্রয়োজন হবে। ঊর্ধ্বতন শাখা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তাহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট শাখাকে জানাবে, অন্যথায় গৃহীত সিদ্ধান্তের সহিত ঊর্ধ্বতন শাখা একমত বলিয়া গণ্য হবে।’

ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে দল কবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বা নিচ্ছে সেটা স্পষ্ট নয় নেতাদের বক্তব্যে। তাই তার ভাগ্য আপাতত ঝুলেই থাকলো বলা যায়।