আজ বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

কর্ণফুলীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য হাজী আছন আলী চৌধুরী জামে মসজিদ

কর্ণফুলী প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:২১:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

মসজিদ আল্লাহর ঘর। উম্মতে মোহাম্মদী (দ.)'র ইবাদতের উত্তম স্থান। তৎকালীন পটিয়া মহকুমার শিকলবাহা গ্রামের জমিদার হাজী আছন আলী চৌধুরী ১৯১৬ সালে মসজিদটি নির্মাণ করে।

 

১৯১০ সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে হাজী আছন আলী চৌধুরী হজ্জব্রত পালন করতে গিয়ে শৈল্পিক মসজিদটি দেখে মনস্থির করেন গ্রামে এসে এমন একটা মসজিদ নির্মাণ করবে। যে ভাবা সেই কাজ-নির্মাণ করেন একেই আকৃতির আল্লাহর ঘর 'মসজিদ'।

প্রায় ১২০ একর জায়গা ওয়াকফ ষ্টেট এ লিখে দেন। মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশাল কবরস্থান নির্মাণ করে অত্র এলাকার মৃত মানুষের দাফন এর সুযোগ করে দেন। মসজিদের উত্তর পাশে খনন করেন পুকুর আর মসজিদের সামনে মাঠ ও প্রবেশ মুখে আজানের সুউচ্চ মিনার। সব মিলিয়ে শিকলবাহা মাষ্টারহাটস্থ হাজী আছন আলী চৌধুরী জামে মসজিদটি ছিল কর্ণফুলী উপজেলা নান্দনিক ও দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও তিনি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার প্রদীপ জ্বালাতে নির্মাণ করেন একটি প্রাইমারি স্কুল যা বর্তমানে আহ্ছানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে সুপরিচিত। এলাকায় অপরাধ দমনে তৎকালীন বন্দর থানার অধিনে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। ডাক যোগাযোগের জন্য হুজুরখানার পাশের কক্ষে পরিচালিত হতো শিকলবাহা ডাকঘরের কার্যক্রম। একজন সফল জমিদারের হিসেবে মরহুম হাজী আছন আলী চৌধুরী এখনো শিকলবাহাবাসীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বরণ্য মহাপুরুষ। 

 

প্রায় ১০০ বছর পর (২০১২-১৩) সালে মরহুমের উত্তরসূরী বর্তমান মসজিদের মাতোয়ালী আলহাজ্ব আবদুল হামিদ মিয়া চৌধুরী, হুমায়ুন চৌধুরী ও সেলিম উদ্দিন চৌধুরী জরাজীর্ণ মসজিদটি ভেঙে নতুন আঙ্গিকে ৪তলা বিশিষ্ট শৈল্পিক ডিজাইনের মসজিদ নির্মাণ করে যা দক্ষিণ চট্টলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। 

 

এ নিয়ে কথা হয় মসজিদের মাতোয়ালী আলহাজ্ব আবদুল হামিদ মিয়া চৌধুরীর সাথে 'তিনি জানান আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদাজান মরহুম হাজী আছন আলী চৌধুরী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে মসজিদ নির্মাণ করেছেন সেই মহান উদ্দেশ্যে আমাদের এ প্রয়াস। এলাকায় দিন দিন মানুষ বেড়েছে তাছাড়া ১৯১৬ সালে নির্মিত মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে উঠেছে তাই মসজিদটি ভেঙে আমরা নতুন রূপে আধুনিক ডিজাইনের ৪ তলা বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করি। এতে ১ জামায়াতে ৪ হাজারের অধিক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবে। অতিরিক্ত তাপদ্রহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনে বসানো হয়েছে এসি।"

১৯১৬ সালে মসজিদটি নির্মাণের পর থেকে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন যুগের বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ শাহ (রহ.) প্রকাশ বড় হাফেজ শাহ, কুতুবদিয়ার হযরত মাওলানা আবদুল মালেক শাহ (রহ.), মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা আবদুল খালেক প্রমুখ। বর্তমানে যিনি খতিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনিও একজন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন, কালার পোল অহিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)  মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা আবদুস সালাম আল কাদেরী। 

 

কোনো প্রকার পরিচালনা কমিটি ও কারো সহযোগিতা ব্যথিত মরহুম হাজী আছন আলী চৌধুরীর সুযোগ্য উত্তরসূরী মোতোয়ালিদের প্রচেষ্টায় প্রতি বছর পবিত্র মাহে রমজান প্রায় ৪০০ মুসল্লিদের ইফতারে আয়োজন চলে এ মসজিদে। 

 

বর্তমানে মসজিদটিতে ১ জন খতিব, ১ জন পেশ ইমাম, ২ জন মুয়াজ্জিন (হাফিজে কুরআন) প্রতি বছর রমজানে খতমে কুরআন (তাহবীহ নামাজ) উনাদের ইমামতিতে হয়।



সবচেয়ে জনপ্রিয়