নানা অব্যবস্থাপনা, অসঙ্গতি ও ত্রুটির অভিযোগে কক্সবাজারের দু'টি বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন হাসপাতালে অভিযানে আইসিইউ, সিটি স্ক্যান, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার সীলগালা করা হয়।
আইসিইউ এবং পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালটির অন্যান্য অসঙ্গতির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন অভিযানকারীরা।
একই দিন জেনারেল হাসপাতালকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা, ইসিজি বিভাগ সিলগালা ও এক্সরে বিভাগ বন্ধ রেখে ক্রুটিগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে সংশোধন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজমিন আলম তুলি ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্র শীলের নেতৃত্বে অভিযানটি চালানো হয়।
তার আগে শুক্রবার ইউনিয়ন হাসপাতালে গিয়ে হতবাক হয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে ডা. টিটু চন্দ্র শীল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউনিয়ন হাসপাতালে আইসিইউ, সিটি স্ক্যান, পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড ও অপারেশন থিয়েটার সীলগালা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শনের পর পরবর্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল হুদা বলেন, তেমন কোন সমস্যা নাই। যেসব ত্রুটির অভিযোগ আনা হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধান হচ্ছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারবাসীর সম্পদ ইউনিয়ন হাসপাতাল। করোনাকালে মানুষের পাশে থেকেছি। আমরা স্বল্প মূল্যে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছি।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নথিপত্র বলছে, কক্সবাজার জেলায় মোট ৩৪ হাসপাতাল/ক্লিনিক, ৮৩ টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ডেন্টাল রয়েছে ১০ টি, মেডিকেল চেকআপ সেন্টার রয়েছে ৫টি।
এরমধ্যে বর্তমানে ২৭ টি হাসপাতাল/ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও চেকআপ সেন্টার ছাড়া অন্যান্যগুলো এখনও নবায়ন হয়নি।
নবায়নের আবেদন জমা দিয়ে চলছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। এমন কি কোন প্রকার অনুমোদন না নিয়ে পুরো জেলা শহরে পরিচালনা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
ডা. টিটু চন্দ্র শীল বলেন, সারাদেশে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হাসপাতালে অভিযান চালানো হবে।
রোগির দালাল ও দালাল নির্ভর হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তিনদিনের এক সফরে কক্সবাজার আসেন বৃহস্পতিবার দুপুরে। তিনি তাঁর নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে শুক্রবার বিকাল হঠাৎ করে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরিদর্শনে যান।
মন্ত্রীর পরিদর্শন সংক্রান্ত বিষয়ে শুক্রবার রাতে ‘স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর’ এর ফেসবুক ফেইসে ছবি-ভিডিও সহ একটি বিবৃতি প্রচার করে।
যেখানে বলা হয়েছে, ‘শুক্রবার বিকেলে মন্ত্রী আকস্মিকভাবে কক্সবাজার শহরের জেলা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ইউনিয়ন হাসপাতাল’ পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী পরিদর্শনকালে ওই হাসপাতালটির ম্যানেজারকে ধুমপানরত অবস্থায় দেখতে পান। হাসপাতালটির ‘আইসিইউ’তে গিয়ে দেখেন ওখানে বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক নেই। সাধারণ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে নার্সের বদলে মিডওয়াইফের উপস্থিতি দেখতে পান। এবং ওই হাসপাতালটিতে সিটি স্ক্যানের অনুমোদন না থাকার পরও সিটি স্ক্যানের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এছাড়া তিনি কক্সবাজার জেলাসহ সারাদেশের সকল বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এসময় মন্ত্রী ওই হাসপাতালের আইসিইউ থেকে শহরের নুনিয়ারছড়ার আজিম নামের একজন সংকটাপন্ন রোগীকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।