আজ রবিবার ৫ মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
কক্সবাজারে হ্যাচারিতে কাঁকড়া পোনা উৎপাদন বিষয়ক সেমিনার

আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে সফট শেল কাঁকড়ার চাহিদা

ইমাম খাইর, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:০৯:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

কক্সবাজারে হ্যাচারিতে কাঁকড়া পোনা উৎপাদন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সোমবার (৬ অক্টোবর) জেলা পরিষদের কনফারেন্স হলে কোস্ট ফাউন্ডেশনের এই সেমিনারে জানানো হয়, উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাঁকড়া চাষের সাথে জড়িত। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সফট শেল কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধি এবং প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ফলে সফট শেল কাঁকড়া চাষের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরাতে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক সফট শেল খামার আছে যেগুলোতে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ লক্ষ কাঁকড়া প্রয়োজন। এসকল কাঁকড়া কক্সবাজারের উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন, সুন্দরবন ও তার আশে পাশের নদী ও খাল থেকে সংগ্রহ করা হয়, যা উপকূলীয় জলজ জীববৈচিত্র এবং ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্সের জন্য হুমকিস্বরূপ। 

 

পেইস প্রকল্পের আওতায় "কাঁকড়া চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন" উপ-প্রকল্পভুক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ শফিকুর রহমান। 

 

তিনি বলেন, কাঁকড়া চাষ দেশের সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর। এর মাধ্যমে রক্ষা হবে প্রাণ-প্রকৃতি। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি  এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। 

 

জলজ প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা ও কাঁকড়া সেক্টরের টেকসহিতা নিশ্চিত করতে হ্যাচারি পর্যায়ে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি জানান। 

 

কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক বারেকুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সীমা রানি, কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ও কক্সবাজার অঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমল জ্যোতি চাকমা ও ক্ষেত্র সহকারী মনোজ চৌধুরী। 

 

তারা কাঁকড়া চাষে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং হ্যাচারি মালিক ও চাষীদের উৎসাহিত করে বক্তব্য দেন। 

 

হ্যাচারি মালিকদের পক্ষে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা অনেক দিন ঘুমন্ত ছিলাম। কোস্ট ফাউন্ডেশন আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে। নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে। সেই পথে এগুচ্ছে কাঁকড়া চাষীরা। 

 

মা কাঁকড়া সংকট, উপযুক্ত পরিবহন সমস্যা, প্যারামিটার, ল্যাব সাপোর্ট না পাওয়ার কারণে কক্সবাজারের কাঁকড়া হ্যাচারি শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান নিরিবিলি হ্যাচারীর জিএম সুজন বড়ুয়া। 

 

বর্তমান বাজারে কাঁকড়ার অর্থনৈতিক মূল্য, কক্সবাজারে কাঁকড়ার সম্ভাবনা, চাষীদের চ্যালেঞ্জ, আগামীর কর্ম পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে নানা তথ্য উপস্থাপন করেন প্রকল্প সমন্বয়ক মোহাম্মদ আবু নাঈম।

 

তার তথ্য থেকে জানা গেছে,  কক্সবাজার জেলায় চাষীরা সনাতন পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করে আসছিলেন। চাষীদের মধ্যে কাঁকড়ার সুষ্ট চাষ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলোনা। ফলে কাঁকড়ার আশানুরূপ উৎপাদন ও লাভ থেকে চাষীরা বঞ্ছিত।

 

এই অবস্থা হতে উত্তরণ পেতে ২০১৯ সালে "প্রমোটিং এগ্রিকালচার এন্ড কমার্শিয়ালাইজেশন এন্টারপ্রাইজ (পেইস)" শীর্ষক প্রকল্পের "কাঁকড়া চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরনের মাধ্যমে উদ্দ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি" উপপ্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ উপজেলার মোট ৭৫০০ জন কাঁকড়ার সাথে জড়িত চাষী ডিপো মালিক, শিকারি, খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ে কাজ করেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন। 

কার্যক্রমগুলো ছিলোঃ

  • কাঁকড়া চাষীদের আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ ব্যবস্থাপনা ও চাষ প্রযুক্তির উপর হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান
  • ডিপো মালিক ও কাঁকড়া সংগ্রহকারীদের নিয়ে কাঁকড়ার সৃষ্ট বাজারজাত প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান
  • কাঁকড়ার মার্কেট এক্টরদের নিয়ে কাঁকড়া চাষী অন্যান্য মার্কেট এক্টর, কাঁকড়া বিক্রেতাদের মধ্যে বাজার সংযোগ তৈরীর লক্ষ্যে কর্মশালার আয়োজন
  • স্থানীয় বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ
  • হ্যাচারি উৎপাদিত কাঁকড়ার নার্সারি ডেমো স্থাপন

 

এছাড়াও উপকূলীয় জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রকৃতি থেকে কাঁকড়ার আহরণ হ্রাস করতে প্রকল্প থেকে উদ্যোক্তা পর্যায়ে ৩ টি কাঁকড়ার মিনি হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে সফলভাবে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, কক্সবাজারে সফলভাবে প্রথম নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন এই হ্যাচারিগুলোর মাধ্যমেই শুরু হয়। হ্যাচারি উৎপাদিত কাঁকড়া পোনা দিয়ে কাঁকড়া চাষের লক্ষ্যে কক্সবাজারে মোট ১০০ জন কাঁকড়ার নার্সারি চাষী তৈরী করা হয়েছে। তারা কাঁকড়ার নার্সারি ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষন পেয়েছে। প্রকৃতি থেকে কিশোর কাঁকড়া আহরণ না করে হ্যাচারি উৎপাদিত কাঁকড়ার পোনা দিয়ে কাঁকড়া চাষ করছে চাষীরা।

 

সেমিনারে কোস্টের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুছ, তানজিরা খাতুনসহ কাঁকড়া চাষী, বাগদা চাষি, হ্যাচারি মালিক, নার্সারার ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।