১৯৯৩ সালে দেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রমের শুরুর দিকে আয়োডিনের অভাবজনিত সমস্যার হার ছিল ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।
২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত এ সমস্যার হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমানে ৭৬ শতাংশ পরিবারে আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণ ব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্ব দেশ থেকে নির্মূল হয়েছে।
আর মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে "আয়োডিনে স্বয়ংসম্পূর্ণ" হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি মিলবে। তাই লবণে শতভাগ আয়োডিন ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার (২১ অক্টোবর) দেশে এই প্রথমবারের মতো বিশ্ব আয়োডিন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার সদর উপজেলার কনফারেন্স হলে আলোচনা সভায় এসব তথ্য ওঠে আসে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া।
তিনি বলেন, যেসব মিলার সঠিক মাত্রায় আয়োডিন মেশাবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখা হবে।
আয়োডিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে লবণ মিল মালিক ও চাষী পর্যায়ে আরো সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান সদর ইউএনও।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এন আই) এর সার্বিক সহযোগিতায় "বুদ্ধিদীপ্ত থাকতে চাই আয়োডিনযুক্ত লবণ খাই" এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অর্ধশত লবণ মিল মালিক, লবণ চাষী ও ভোক্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিসিক কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রিদওয়ানুর রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় "খাদ্যে আয়োডিন স্বল্পতাঃ জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব ও আমাদের করণীয়" বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল কক্সবাজার জোনের কো-অর্ডিনেটর প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন।
তার দেওয়া তথ্য মতে, দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতি অন্যতম। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের আয়োডিন প্রয়োজন দৈনিক ১৫০ মাইক্রোগ্রাম। মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ও থায়রয়েড হরমোন তৈরির জন্য আয়োডিন আবশ্যক। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড বা গলাফোলা রোগ, ক্রেটিনিজম (হাবাগোবা ও বামনত্ব), শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্বসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
৯০ দশকের পূর্বে বাংলাদেশে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যাসমূহ প্রকট আকার ধারণ করেছিল। পরবর্তীতে সমস্যা নিরসনকল্পে সার্বজনীন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বিসিক। লবন মিলের নিবন্ধন প্রদান, মিলসমূহকে পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। লবণ মিল ও বাজার পর্যায়ে মনিটরিং এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে বর্তমানে ৭৬ শতাংশ পরিবারে আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণ ব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্ব দেশ থেকে নির্মূল হয়েছে।
গর্ভবতী মহিলাদের আয়োডিনের অভাবে অকাল গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, বুদ্ধিহীনতা, বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম ইত্যাদি সমস্যা হয়। অনেক সময় শিশু বোবা, কানা ও ট্যারা হয়।
মানুষের মস্তিষ্কের শতকরা ৯০ ভাগ গঠন হয় গর্ভকালীন তিন মাস থেকে ৩ বছর বয়স পর্যন্ত। বাংলাদেশে আইডিডি এর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪২ মিলিয়ন।
আয়োডিন দিবসের সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, বিএসটিআই কক্সবাজারের উপপরিচালক মিয়া মোঃ আশরাফুল আলম, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক খান।
আয়োডিনের প্রয়োজনীয়তার উপর বিভিন্ন তথ্যসহ বক্তব্য দেন, কক্সবাজার সদর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক জহরলাল পাল, ডাঃ মোস্তাফিজুল আলম, ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম আজাদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের সাবেক কনসালটেন্ট (ইউএসআই প্রোগ্রাম) শেখ জাহাঙ্গীর হাছান মানিক, কক্সবাজার সদর সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ হালিম উল্লাহ, কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) এর বার্তা সম্পাদক ইমাম খাইর।
লবণে আয়োডিন না মেশালে তা হবে স্মার্ট জাতি গঠনে বাধা, মানবতার সাথে প্রতারণা। দেশ ও মানবতা স্বার্থে সবাইকে আরও বেশি সচেতন দায়িত্ববান হওয়ার আহ্বান জানান বিসিক কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ রিদওয়ানুর রশিদ।
এ সময় ইসলামপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অছিয়র রহমান, মাস্টার আব্দুল কাদের, হাজী জাফর আলম, মনজুর আলম, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আবছারসহ লবণ মিল মালিকগণ উপস্থিত ছিলেন।