আগামী ৭ ডিসেম্বর, বুধবার কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সকালে তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ উপলক্ষে ইনানী পাটোয়ারটেক সৈকতের পশ্চিমে সাগরের জলরাশির ওপর নির্মিত দীর্ঘ সেতুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং তিনদিনের নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। বিকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন। সেখানে সরকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের ২৮টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৪টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার কথা রয়েছে। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উদ্বোধনযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার সড়ক বিভাগের ৩টি রয়েছে। যেগুলোর কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তার সুফলও ভোগ করছে জনগণ। প্রকল্পসমূহ হলো- টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ জেলা মহাসড়ক (জেড-১০৯৯)- হাড়িয়াখালী হতে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনঃ নির্মাণ, প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্প: বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ জেলা মহাসড়কটি অবস্থিত। সড়কটি ঐ এলাকার জনসাধারণসহ মায়ানমার হতে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের প্রধান সড়ক। টেকনাফে অবস্থিত স্থলবন্দর দিয়ে এবং সর্বদক্ষিণের জনসাধারণের কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকার সড়কটিকে ৩.৭০ মিটার হতে ৫.৫০ মিটারে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে নতুন নির্মাণ, প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ করার প্রকল্পটি গ্রহণ করেন। এই প্রকল্পে ৫.১৫ কিঃ মিঃ সড়কাংশ, ১ টি সেতু ও ১২ টি কালভার্ট রয়েছে। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহে আরেফীন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় ওই এলাকার জনসাধারণ সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। তাছাড়া ওই এলাকার উৎপাদিত পণ্যসমূহ নির্বিঘ্নে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সহজে পৌঁছানো সহজতর হচ্ছে। সড়কটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ প্রান্ত শাহপরীরদ্বীপকে সংযুক্ত করার ফলে দেশী-বিদেশী পর্যটকের আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পটি সম্পাদন ব্যয় ৫৯ কোটি টাকা।” রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক (এন-১০৯ এবং এন-১১৩) যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প: কক্সবাজার জেলার রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক (এন-১০৯ এবং এন-১১৩) দিয়ে ঐ এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী যাতায়াত করে থাকেন। রামু সেনানিবাসের অবস্থানের কারণে সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার এই সড়কটির সামরিক গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া বর্ণিত সড়কের পার্শ্বে রামু বৌদ্ধমন্দির অবস্থিত। যার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য লক্ষ লক্ষ দেশী-বিদেশী পর্যটক এই সড়কে আগমন করে থাকেন। উক্ত সড়কটি চট্টগ্রাম হতে সরাসরি টেকনাফ গমনের একমাত্র মাধ্যম হওয়ার কারণে বর্তমান সরকার সড়কটিকে ৩.৭০ মিটার হতে ১০.৩০ মিটারে উন্নীতকরণের প্রকল্প গ্রহণ করেন। যার মধ্যে ২ (দুই) টি সেতু ও ১৪ (চৌদ্দ) টি কালভার্ট অন্তর্ভূক্ত আছে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আতাউর রহমান বলেন, “প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় টেকনাফ হতে দেশের প্রতন্ত অঞ্চলে মায়ানমার হতে আমদানীকৃত পণ্যসমূহ এবং মায়ানমার থেকে সাময়িক আশ্রিত রোহিঙ্গা শরাণার্থীদের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ক্যাম্প সমূহে পরিবহন সহজতর হয়েছে এবং সড়কের দুরত্ব ১২.০০ কিঃ মিঃ হ্রাস পেয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ ওখানকার জনসাধারণ সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। পর্যটকসহ জনসাধারণ নিরাপদভাবে ওই সড়কটি ব্যবহার করছে। প্রকল্পটি সম্পাদনে ব্যয় হয়েছে ১৮৪ কোটি টাকা।” লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক (এন-১১০) চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প: কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়কটি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত। প্রতিনিয়ত দেশী-বিদেশী লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমাগমে এই সড়কটি মুখরিত থাকে। বর্তমান সরকার পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে আধুনিকায়ন করণের লক্ষ্যে সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য-৯.৬৪ কিঃ মিঃ। যার মধ্যে ২০ (বিশ) টি কালভার্ট অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, “প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ ঐ এলাকার জনসাধারণ সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। তাছাড়া সড়কের উভয় পার্শ্বে সড়ক বাতি স্থাপন করায় রাতের আলোতে সুপ্রশস্ত ফুটপাত ধরে পর্যটকদের আনাগোনা এই নগরীর দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। প্রকল্প সম্পাদনে ব্যয় হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা।” কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহে আরেফীন বলেন, “টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ জেলা মহাসড়ক, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক এবং লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ- এই তিন প্রকল্পই খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ, যা সড়ক বিভাগের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।”