আজ শনিবার ৪ মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথম ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য গ্রহণ

ইমাম খাইর, কক্সবাজার: | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:০২:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিয়েছেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাও ১৪০০ ইয়াবা উদ্ধারের মামলায়। আদালতের এ প্রান্তে বিচারক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্ত ছিলেন। একমাত্র আসামি আব্দুন নুর পলাতক। 

 

রবিবার (২৬ নভেম্বর) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ এর বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গাঁ সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।

 

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জিআর মামলা নং-১৫২/২০১৯ (রামু) এর বাদির সাক্ষ্য প্রদান করেন রামু থানার তৎকালীন পুলিশ উপপরিদর্শক (এস আই), বর্তমানে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় কর্মরত মো. আরিফ হোসেন। সাক্ষ্য প্রদানের কার্যক্রম সমন্বয় করেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। 

 

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এডভোকেট রফিক উদ্দিন চৌধুরী অনলাইনে বাদির জবানবন্দী নেন এবং বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গাঁ আইনানুযায়ী তাঁর সাক্ষ্য রেকর্ড করেন।

 

তারআগে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের (প্রশাসন শাখা) ২০ আগস্ট জারিকৃত ৪৯০ নং বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত নির্দেশনা মোতাবেক অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য বাদির নিকট নোটিশ প্রেরণ করেন বিচারক।

 

তার আলোকে আদালত প্রেরিত সুনির্দিষ্ট লিংক ব্যবহার করে সাক্ষ্য দেন এস আই মো. আরিফ হোসেন।

 

সাক্ষ্য প্রদানের সুবিধার্থে মামলার প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস ও সাক্ষ্য প্রদানের নিয়মাবলী সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও সাক্ষি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর ইমেইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে প্রেরণ করা হয়।

 

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ এর বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি।

 

মামলার এজাহারের সুত্র ধরে তিনি জানান, ২০১৯ সালের ২১ মে রামুর খুনিয়া পালং থোয়াইংগাকাটা এলাকা থেকে সিএনজি তল্লাসী করে ১৪০০ ইয়াবাসহ আব্দুন নুর হোসেন নামক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেন এস আই মো. আরিফ হোসেন। বর্তমানে তিনি সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় কর্মরত। 

 

এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসার জন্য কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১ থেকে মামলার বাদী এসআই মোঃ আরিফ হোসেনের কাছে সমন প্রেরণ করা হয়। সমন পেয়ে এসআই মোঃ আরিফ হোসেন জরুরী সরকারি কাজের ব্যস্ততা, সময়ক্ষেপণ, অর্থের অপচয় রোধ, মামলার আধিক্য হ্রাসকরণের জন্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০২৩ সালের ২০ আগস্টের ৪৯০ নম্বর আদেশের বিধান মতে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিতে আদালতে আবেদন করেন। বিজ্ঞ বিচারক গত ১১ সেপ্টেম্বর আবেদনটি মঞ্জুর করে এসআই মোঃ আরিফ হোসেনকে সুনামগঞ্জ থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিতে আদেশ দেন। আদেশে একইসাথে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীকে অনলাইনে সাক্ষ্য ও অন্যান্য কার্যক্রম চলাকালে সমন্বয়কারী হিসাবে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেন।

 

মামলার একমাত্র আসামি আবদুর নুর পলাতক থাকায় সাক্ষ্য প্রদানকারী এসআই মোঃ আরিফ হোসেনকে জেরা করা হয়নি।

 

কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহজাহান নুরী জানান, সুনামগঞ্জ এসআই মোঃ আরিফ হোসেন এর ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান ছিলো-কক্সবাজার জেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর সর্বপ্রথম ভার্চুয়ালী সাক্ষ্য গ্রহণ। এ সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী সাক্ষ্য গ্রহণে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করলো।

 

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক বলেন, ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য গ্রহণ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর জন্য একটা মাইলফলক। এটা কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর বিচার কার্যক্রমের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। 

 

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর বিচার প্রক্রিয়াকে আরো আধুনিক ও গতিশীল করবে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।