আজ শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০
আদালতে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ

ঋণ খেলাপির দায়ে আরএসআরএম এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৮ জানুয়ারী ২০২২ ০১:২৩:০০ পূর্বাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

 

 

রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে ৩১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ খেলাপির দায়ে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। 

 

আগামী ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাকসুদুর রহমানের পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। আদেশের কপি পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বুধবার শুনানি শেষে এ আদেশ জারি করেন চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালত।

 

আদালত সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। ওই শাখায় ৩১২ কোটি ৮২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ঋণ খেলাপি আরএসআরএম। তবে ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় জামানত অত্যন্ত নগণ্য।

 

মামলা দায়েরের পর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ সম্পূর্ণ অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংক যত্নশীল ছিল না। সাড়ে তিন বছর পর বিষয়টি আদালতের নজরে এলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে সমন জারি করা হয়। একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের এ রকম নিষ্ক্রিয়তা গ্রাহকদের খেলাপিপ্রবণ করে তুলছে, যা হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

 

আদালত জানান, স্বীকৃত মতে বিবাদী (মাকসুদুর রহমান) একজন ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। কারণ ২০১৯ সালে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সুযোগে ঋণ পুনঃতফসিল করেছেন অনেক খেলাপি। কিন্তু সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তা গ্রহণ করেননি বিবাদীরা। 

 

মাকসুদুর রহমানের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। এর আগে এই আদালতে বিচারাধীন অনেক মামলার আসামি অর্থ পাচার করে দেশত্যাগ করেছেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করে মাকসুদুর রহমানকে দেশত্যাগের অনুমতি দিলে ব্যাংকের অর্থ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন আদালত।

 

 

খেলাপি ঋণের ভারে দেশের ব্যাংকিং খাত ধুঁকছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ছাড় দিয়েও খেলাপি ঋণ আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। অত্যধিক মামলাজটের কারণে বিচারিক প্রক্রিয়ায় খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ হতাশাব্যঞ্জক। এ আদালতের বহু আসামি দেশত্যাগ করায় তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় শীর্ষস্থানীয় ঋণ খেলাপিদের বিদেশ গমনের অধিকার, বিচারিক সিদ্ধান্তের অধীনে থাকা ন্যায়সঙ্গত। তাই গত বছরের ১৭ নভেম্বর আসামির করা দরখাস্ত এবং আপত্তি নাকচ করা হলো।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয় ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর মানে চলতি বছরের ৯ মাসের হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

 

তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, জনতা ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি মাত্র কয়েকটি শিল্প গ্রুপের কাছে। এর মধ্যে থার্মেক্স, ক্রিসেন্ট, এননটেক্স ও আরএসআরএম গ্রুপের খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা দরকার। মাত্র চারটি গ্রুপের ঋণ নিয়মিত হলে জনতা ব্যাংকের কোনো পিছুটান থাকবে না।

 

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে  পক্ষ থেকে মাকসুদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে হোয়াসঅ্যাপে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোনো উত্তর দেননি।