অসচ্ছল ও পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথকে সুগম করতে সরকারী ও বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করতে হবে। অদম্য মেধাবীদের আর্থিক সহায়তায় ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলে দেশের শিক্ষার হার বাড়বে এবং রোধ হবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “অদম্য মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান” অনুষ্ঠানে অতিথিরা এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ডক্টর তোফাইল আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যন কায়সারুল হক জুয়েল।
শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি কোস্টের এই মহৎ উদ্যোগ কক্সবাজারের শিক্ষার উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকা রাখবে। অন্যান্য সংস্থার উচিৎ এই উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এই উন্নয়নকে আরো বেগবান করা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে কোস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কোস্ট তার ক্ষুদ্র্ঋণের লভ্যাংশ থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এমপিওভূক্তিহীন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে চেস্টা করছি। এ অঞ্চলের শিক্ষাখাতকে আরো উন্নত করতে যথেষ্ঠ পরিমান সাইন্সল্যাব, প্যারাটিচার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রয়োজন। সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাল্যবিবাহ, কুসংস্কৃতি ইত্যাদি প্রতিরোধের পাশাপাশি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশের ৬টি অঞ্চলে ৯৪ জন অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বপ্রথম আমরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। এখনো মানবিক কর্মসুচি অব্যাহত আছে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন- কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখি, কোস্ট ট্রস্টি বোর্ডের ট্রেজারার মোস্তফা কামাল আহমেদ (এফসিএ), কোস্ট ট্রস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান গওহর নঈম ওয়ারা, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি এ্যাডভোকেট সাকী-এ-কাউছার, উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক রিতা বালা দে, সুজনের উখিয়া উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ শিকদার। অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলার ৯ টি উপজেলার ১৫ জন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীকে সর্বমোট ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তোফাইল আহমদ বলেন, আমরা আমাদের মেধা দিয়ে এই সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে শিক্ষা অর্জনের বিকল্প নেই। কিন্তু নানা বাধার কারণে অনেকে শিক্ষা অর্জনের পথ থেকে ঝরে যায়। কোন মেধবী শিক্ষার্থী যেন এসব বাধার কারনে ঝরে না যায় সেজন্য আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। পদ দিয়ে নয়, কাজ দিয়ে আমাদেরকে বড় হতে হবে।
শাহেনা আক্তার পাখি বলেন, শিক্ষার্থীরা জাতির কর্ণধার। শিক্ষাই জতির মেরুদন্ড সুতরাং আপনাদেরকে মেধা দিয়ে অনেকদুর এগিয়ে যেতে হবে।
মোস্তফা কামাল আহমেদ বলেন, শিক্ষাবৃত্তি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়, অনুপ্রেরণা দেয়। এই অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে তোমাদেরকে আরো অনেক বড় হতে হবে।
গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, সবকিছুর আগে আমাদেরকে ভালো মানুষ হতে হবে। আমাদের শপথ হোক ভালো মানুষ হওয়ার এবং চিন্তার বিকাশ ঘটানোর।
সাকী-এ-কাউছার বলেন, তোমাদেরকে আন্তরিকতার সঙ্গে পড়াশোনা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে সমাজের ও দেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা রাখতে হবে।
রিতা বালা দে বলেন, মনযোগ দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে পড়াশোনা করলে একদিন নিজের স্বপ্ন ছোঁয়া যাবে। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে শিক্ষার বিকল্প কিছুই নেই। অসচ্ছল ও পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীরাও যেন উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁচাতে পারে সেই সুযোগ আমাদেরকে করে দিতে হবে।
এছাড়া কোস্ট ক্ষুদ্র্ঋণের আঞ্চলিক কর্মসুচি সমন্বয়কারী আশেকুল ইসলাম, এলাকা ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান, সমৃদ্ধি প্রকল্পের সমন্বয়ক দিদারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্তদের মধ্যে অনুভ‚তি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- মোহাম্মদ শাকিল খান, সুমাইয়া সাদিয়া ও লে মে।