পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যমতে, পুরো বান্দরবানে বৈধ ইটভাটা আছে একটি। আর পুরো বান্দরবান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৫৫টি ইটভাটায় পুড়ছে পাহাড়ি বনের গাছ। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে মাটির জন্য কাটা হচ্ছে পাহাড় আর কৃষি জমি।
লামা, আলী কদম, থানচি, ও নাইক্ষংছড়ি ঘুরে দেখা যায়, দুর্গম এলাকায় পাহাড়ি বন ও জনপদের মধ্যেই রয়েছে ইটভাটা। কোনো কোনো ইটভাটা রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খুব কাছে। ইট উৎপাদনের সিজন সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হয়। আর এ সময় উজাড় হতে থাকে পাহাড়ি বন। খোঁদ জেলা শহরের গোয়ালিয়া খোলা এলাকায় আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ গড়ে তুলেছেন অবৈধ ইটভাটা। সরেজমিনে দেখা গেছে ভাটারটির পাশে পুড়নোর জন্য মওজুদ করা হয়েছে টনকে টন কাঠ। তবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজল কান্তি দাশ তেলে-বেগুনে জ¦লে উঠে বলেন ইটভাটাটি কার নামে আগে খবর নেন,এটি আমার নামে না।
বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পাহাড়িদের মধ্যে আতংক থাকলেও প্রভাবশালী মহলের উদ্যোগেই ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের গাছ। সবুজ সমৃদ্ধ পাহাড়ি বন ধ্বংসের ফলে অনেক বন্যপ্রাণীও এখন বিলুপ্ত প্রায়। যারা বনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের জীবিকাও হুমকির মুখে। ইটভাটার মাটির জন্যও কাটা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পাহাড় আর কৃষি জমি । স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে হেনস্তার শিকার হন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবান কলেজের একজন শিক্ষক।
তিনি আরও বলেন, ‘হাজার বছর ধরে দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের এসব জনপদে যে সব মানুষ বসবাস করেন তারা জানেন পাহাড়ের ধর্ম কী? তারা গাছকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। এই গাছই তাদের জীবিকার অন্যতম ভরসা। বনভূমি সৃষ্টিতে তাদের অনেক অবদান। তাদের যত্নে গড়া বন কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। প্রতিবাদ করতে গেলে অনেক সমস্যা।’
পাহাড়ি জনপদের জ্বালানীর প্রধান উৎস কাঠ। এসব কাঠ মূলত গাছের ডালপালা। তাই পাহাড়ের বড় বড় গাছের ডালপালা ও মরে শুকিয়ে যাওয়া কাঠই এখানকার মানুষের জ্বালানির চাহিদা মেটায়। এজন্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠি নিজেরা বনায়নের সঙ্গে যুক্ত।